আশা করি সিলেট ওয়াসা গণমুখী হয়ে পানির বিল ঠিক করবে

সিলেট সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকার জন্য ‘সিলেট পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ’ (সিলেট ওয়াসা) প্রতিষ্ঠা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত বুধবার এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওয়াসা প্রতিষ্ঠার সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সিলেটে নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সামনের কাতারে থাকা এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও সিলেট স্টেশন ক্লাবের সাবেক সভাপতি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সিলেট ওয়াসা প্রতিষ্ঠা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কীভাবে দেখছেন?

এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম: সিলেটের নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, পানি সরবরাহ ও নর্দমা ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা একটা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হোক। এখন সিলেট ওয়াসা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রজ্ঞাপন হয়েছে, আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। দ্রুত যেন এর কার্যক্রম শুরু হয়, এ দাবিও আমরা এখন জানাচ্ছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এত দিন ধরে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরে পানি সরবরাহ ও নর্দমা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ওয়াসা গঠনের পর কী ধরনের পরিবর্তন হতে পারে? সেবার কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন কী?

এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম: আমরা আশা করছি, সেবাদানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যেহেতু আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে, তাই কেবল সেবার মান নয়, সবকিছুতেই আমূল একটা পরিবর্তন আসবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা। এখনই আমরা নেতিবাচক কিছু বলতে রাজি নই। আমরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমরা মনে করি, বিষয়টি বাস্তবায়িত হলে অনেক পরিবর্তন আসবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সিটি করপোরেশনের এলাকা ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে সম্প্রতি দ্বিগুণের বেশি করা হয়েছে। বর্ধিত অংশে এখনো সিটি কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহ ও নর্দমা ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেনি। ফলে ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর কর্তৃপক্ষের প্রথম চ্যালেঞ্জই হবে বর্ধিত অংশে পানি সরবরাহ ও নর্দমা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম: বর্ধিত অংশে আধুনিক কোনো ড্রেনেজ সিস্টেম নেই বললেই চলে। প্রাকৃতিকভাবে যেসব নালা-খাল আছে, সেভাবেই চলছে। জলাবদ্ধতার সমস্যাও আছে। আর পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থাই নেই। এসব বর্ধিত অংশের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানি সংগ্রহ করেন পুকুর, গভীর নলকূপসহ নানা মাধ্যমে। অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে এসব এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশও বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এ ক্ষেত্রে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ যদি এসব এলাকায় পানি সরবরাহের একটা নিজস্ব ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারে, সে ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ স্থাপন বন্ধ হবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। সেই সঙ্গে বর্ধিত এলাকার বাসিন্দাদের পানি পাওয়ার ব্যবস্থাও নিশ্চিত হবে। আশা করি, সিলেট ওয়াসা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বর্ধিত এলাকার বিষয়টি মনোযোগ সহকারে ভেবে দেখবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কয়েক মাস আগে সিটি কর্তৃপক্ষ নগরে মাসিক পানির বিল বাড়িয়েছিল। জনদাবির মুখে শেষ পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলররা মিলে পানির বর্ধিত বিল কমিয়েছেন। কিন্তু সিলেট ওয়াসা প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকবেন। জনপ্রতিনিধি নন, এমন ব্যক্তি ওয়াসা পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় দাম কমানোর ক্ষেত্রে জনদাবির বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়ার শঙ্কা আছে কী?

এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম: এ ক্ষেত্রে আমাদের একটা আশঙ্কা আছে। জনপ্রতিনিধি থাকার কারণে কিছুদিন আগেও আমরা পানির বিল কমানোর দাবি উত্থাপন করেছি। আমরা তখন বলেছি, এভাবে হঠাৎ করে অযৌক্তিকভাবে পানির বিল বাড়ানো ঠিক হয়নি। সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা আমাদের দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য হয়েছেন। দাবি মেনে নেওয়ার মূল কারণই হচ্ছে, তাঁরা জনপ্রতিনিধি, শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছেই তাঁদের ভোট চাইতে হবে। এখন সিলেট ওয়াসা যেহেতু অনির্বাচিত কর্তৃপক্ষ, তাই এ ক্ষেত্রে তারা এসব জনদাবি কতটুকু শুনবে, এটা নিয়ে আশঙ্কা আছে। তবে আমরা আশা করি, সিলেট ওয়াসা অবশ্যই গণমুখী চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে পানির বিল নির্ধারণ করবে। প্রয়োজনে গণশুনানির মাধ্যমে তারা পানির বিল নির্ধারণ করবে, এটাই প্রত্যাশা করি।