চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লকডাউন প্রত্যাহার করে নিয়েছে প্রশাসন। প্রথম দফা পরীক্ষায় এই হাসপাতালের ১৭ জনের প্রতিবেদন করোনা 'পজিটিভ' আসার পর লকডাউন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে, কেউই করোনায় আক্রান্ত নন। এই অবস্থায় তাঁরা শনিবার হোম কোয়ারেন্টিন ছেড়ে তিনদিনের মাথায় কাজে যোগ দিয়েছেন।
হাসপাতােলর সব ধরনের সেবা টানা তিন দিন বন্ধ ছিল। জরুরি 'ফ্লু কর্নার' ছাড়া সব বিভাগের সেবা শনিবার সকাল থেকে চালু হয়েছে। অন্তবিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সবখানে শুরু হয়েছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতি এবং রোগীদের পদচারণায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেই ভুতুড়ে পরিবেশ কেটে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভবত কারগরি ত্রুটির কারণে এতগুলো মানুষের করোনা পজিটিভ প্রতিবেদন এসেছিল। তার ভিত্তিতে হাসপাতালের সেবা সীমিত করা হয়েছিল। ঢাকা থেকে পরীক্ষা করানেরা পর সবগুলো প্রতিবেদন 'নেগেটিভ' আসায় শনিবার থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শনিবার সরেজমিনে সরকারি এই হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তা সিলভিয়া পারভীন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।তাঁকে সহযোগিতা করছিলেন ব্রাদার সানি আলম ও ওয়ার্ডবয় সুজন। তাঁরা রোগীদের সিরিয়াল ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করছিলেন।
স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য কর্মীদের (সিএইচসিপি) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলে। নমুনা সংগ্রহ ও করোনা রোগীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা এবং সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান বিষয়ক এই প্রশিক্ষণ। তাতে ২২জন সিএইচসিপি অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক ছিলেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোর্তজা আরেফিন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) বিপ্লব শেখ।
জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় আছিয়া খাতুন নামে এক নারীর সঙ্গে। প্রাগপুর গ্রাম থেকে সেবা নিতে এসেছিলেন তিনি। এই নারী বলেন, তাঁর স্বামী জন্ডিসে আক্রান্ত। তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, 'করুনার কারণে গ্যালো তিন দিন হাসপাতালডা বন্দ ছিল শুনেলাম। এ জন্যি আসিনি। গরিপ মানুষ তাই চুঙোড্যাঙায় যাতি পারিনি। আজ (শনিবার) সকালে খুলেচে, জানার পর আসিচি।'
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার ৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়।পরীক্ষায় ২৮জনকে করোনা 'পজিটিভ' হিসেবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ২১জনই ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী (চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ডবয় ও বিভিন্ন ধরনের কর্মচারী)। বাকিদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পাঁচজন ছিলেন সাধারণ নাগরিক। ওই ফলাফল নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় পর দিন তা অমীমাংসিত বলে ঘোষণা দিয়ে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। সেখানে পুনরায় নমুনা পরীক্ষার পর ৩০ এপ্রিল রাতে প্রতিবেদন পাওয়া যায় । তাতে জানানো হয়, ওই ২৮জনের মধ্যে মাত্র একজন করোনা 'পজিটিভ'। তাদের ২১জনই স্বাস্থ্যকর্মী। সাতজন চিকিৎসক এবং ল্যাব টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ডবয় ও চালকসহ আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই ১৭ জন।
এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দুজন নার্স ও দুজন ওয়ার্ডবয় ছিলেন। সদর হাসপাতালের ওই চারজনও কাজে যোগদান করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আরএমও শামীম কবির।