বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আজ শনিবার সকালে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আজ শনিবার সকালে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

আবার মহাসড়ক অবরোধে শিক্ষার্থীরা, ধর্মঘট বাসশ্রমিকদের

দ্বিতীয় দফায় ১৩ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে ফের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে আটকে গেছে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও কুয়াকাটাগামী যান চলাচল। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মেসে হামলার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাতে নগরের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দুই পরিবহনশ্রমিককে আটকের প্রতিবাদে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন শ্রমিকেরা। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডাকা ধর্মঘটের কারণে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সব পথের বাস চলাচল বন্ধ আছে। আটক দুই শ্রমিক হলেন সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের সহকারী মো. ফিরোজ মুনসি ও এমকে পরিবহনের বাসের সুপারভাইজার আবুল বাশার ওরফে রনি।

দুই শ্রমিককে আটকের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে রুপাতলী হাউজিং এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা দায়েরের পর গতকাল রাতে দুই পরিবহন শ্রমিককে আটক করা হয়। তাঁরা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। বাকি হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এর আগে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ তুলে নেন। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ও প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনস্থলে যান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় চান। এরপর শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁদের মহাসড়ক অবরোধ স্থগিত করেন। আজ সকাল ১০টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অমিত হাসান বলেন, ‘প্রশাসন অনেকটাই গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে, সে জন্য আমাদের মৌলিক অধিকারের জায়গা থেকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। আর সড়ক অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে, এ জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এ ছাড়া আমাদের বিকল্প কোনো পথ নেই।’

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহতরা হামলাকারীদের নামের তালিকা দিলেও প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা না করে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। আর মামলার বিবরণে ঘটনার ভয়াবহতা, নির্যাতনের ধরন উল্লেখ না করে কেবল মারধর ও জখমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রহসন ছাড়া কিছু না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা যেনতেনভাবে দায়ের করা ওই মামলা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

গত মঙ্গলবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিবহনশ্রমিকদের হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর গত বুধবার সকাল থেকে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। পরে ওই দিন বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওই দাবি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আজ শনিবার সকালে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহা. মুহসিন উদ্দীন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। তবে ওই মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দায়ের করা ওই মামলা প্রত্যাখ্যান করেন।

এরপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সুজয় শুভ বলেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া তিনজনের নাম দিয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় আহত শিক্ষার্থীরাও বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মারধরের একটি সাধারণ মামলা করেছে কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করেই। এটা অগ্রহণযোগ্য। এ সময় পুনরায় মামলা সংশোধন করে এবং আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করার দাবি জানান তাঁরা। অন্যথায় শুক্রবার বিকেল পাঁচটার পর পুনরায় সড়ক অবরোধ ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ দুই শিক্ষার্থীকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে বিআরটিসি বাসের এক শ্রমিক মারধর ও লাঞ্ছিত করেন। এর প্রতিবাদে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রফিক নামের অভিযুক্ত বাসশ্রমিককে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এর জেরে পরিবহনশ্রমিকেরা মঙ্গলবার গভীর রাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকায় মেসে বসবাসরত অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। পরিবহনশ্রমিকেরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে যাঁকে যেখানে পান, সেখানে হামলা চালান। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এ হামলার ঘটনা অব্যাহত থাকে। রাত দুইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।