আর বাসায় থাকতে পারছেন না বাসিন্দারা, খুঁজছেন নিরাপদ আশ্রয়

নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন সিলেট নগরের বাসিন্দারা। আজ শনিবার সকালে নগ‌রের শাহজালাল উপশহর এলাকায়
ছবি: মানাউবী সিংহ

সিলেট শহরের শাহজালাল উপশহর এলাকার জে ব্লকের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান। নৌকায় করে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপশহর মোড়ে পৌঁছান তিনি। বৃষ্টিতে এর মধ্যে সবাই ভিজে গেছেন। নৌকায় থাকা তিনটি ব্যাগ নামাতে নামাতে তিনি বললেন, ‘যে অবস্থা দেখছি, আর বাসায় থাকতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে বাসার সবাইকে নিয়ে বের হয়েছি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে চলে যাব।’

কথা বলতে বলতে আবার নৌকায় উঠে আরও কিছু মালামাল আনার জন্য বাড়ির দিকে রওনা দেন তিনি।

সিলেট নগরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পাহাড়ি ঢল আর প্রবল বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টার মধ্যে নতুন করে নগরের অন্তত ২৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নগরের বাসিন্দারা যে যেদিকে পারছেন, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন।

শনিবার সকালে সিলেট নগরের প্রায় ২০টি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব কটি এলাকা এবং সড়কে উঠেছে পানি। এর মধ্যে শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, নাইওরপুল, মিরাবাজার, টিলাগড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছুদীঘির পাড়, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, দাড়িয়াপাড়া এলাকার সড়কে এবং বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে।

এর মধ্যে সড়কে পানির স্রোত বেশি থাকায় নাইওরপুল থেকে সোবহানীঘাটের সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যার পানি জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় সড়কে বেশ কয়েকটি যানবাহন অকেজো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা জামিল আহমেদ। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পানি ভেঙে রিকশায় করে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। উপশহর মোড় এলাকায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বন্যার মধ্যে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পানির মধ্যে তিন দিন ছিলাম। এখন বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। বাসায় আর থাকার মতো অবস্থা নেই। আপাতত এক বন্ধুর বাসায় উঠব।’

মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষ। আজ শনিবার সকালে সিলেট নগরের সোবহানীঘাট মোড়ে

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপশহর মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফকেও। এ সময় পুলিশের একটি ভ্যান তাঁকে নিয়ে তাঁর কার্যালয়ের দিকে রওনা দিতে দেখা যায়।

নগরের দাড়িয়াপাড়া, মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় শনিবার বেলা ১১টার দিক থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। এরপর বেশ কয়েকটি বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে সড়কে দাঁড়িয়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

দাড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা ভবতোষ পাল বলেন, বাসায় পানি প্রবেশ করেছে। শুক্রবার ইট-সিমেন্ট দিয়ে বাঁধ বানিয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঝুম বৃষ্টিতে পানি ঘরের তৈরি করা বাঁধ উপচে প্রবেশ করেছে। এখন ঘরে হাঁটুসমান পানি।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের হিসাব নেই। যে যেদিকে পারছেন ছুটছেন। বাসিন্দারা যেখানে উঁচু জায়গা পাচ্ছেন, সেখানে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে নগরের বেশ কয়েকটি ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করায় অনেকে দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছেন।