আরসা প্রধানের নির্দেশে মুহিবুল্লাহকে খুন, ঠিকানা না পাওয়ায় নির্দেশদাতার নাম বাদ

নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ
ফাইল ছবি

মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার ওরফে জুনুনির নির্দেশে এ সংগঠনের ৩৬ সদস্য পরিকল্পিতভাবে গুলি করে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে (৫০) হত্যা করেন। তবে ঠিকানা শনাক্ত করতে না পারায় জুনুনিসহ সাতজনকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে এসব কথা বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী মুহিবুল্লাহকে প্রথম গুলি করেন আরসা নেতা মাস্টার আবদুর রহিম ওরফে রকিম, এরপর আরও দুটি গুলি করেন জাহিদ হোসেন ওরফে লালু এবং আরেকটি গুলি করেন খাইরুল আমিন। চারটি গুলির পর মুহিবুল্লাহ মাটিতে ঢলে পড়লে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সন্ত্রাসীরা স্থান ত্যাগ করেন।

গতকাল পুলিশ ২৯ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে জেলা কারাগারে বন্দী। প্রথম গুলি চালানো রহিমসহ ১৪ জন ঘটনার পর থেকে পলাতক। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই আরসার (আল-ইয়াকিন নামেও পরিচিত) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। তাঁরা সবাই রোহিঙ্গা শিবিরে চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, মানব পাচার, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িত বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী সালাহ উদ্দিন।

পুলিশ জানায়, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। ৮ মাস ১৩ দিন পর গতকাল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করতেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি প্রত্যাবাসন জোরদারের পক্ষে রোহিঙ্গাদের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরসাসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী মুহিবুল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। নাম-ঠিকানা শনাক্ত না হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে হামলার ঘটনায় নির্দেশদাতা আরসার প্রধান জুনুনি, ওস্তাদ খালেদ ওরফে খালিদ, ওস্তাদ হাশিম, ইব্রাহিম, আলমগীর, শুভ ওরফে আলমগীর ও মৌলভি মোস্তাকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে; যদিও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কয়েকজন ঘটনার সঙ্গে জুনুনিসহ সাতজনের সম্পৃক্ত থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন।

আরসার অভিযুক্ত ২৯ সদস্য

দাখিল করা অভিযোগপত্রে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে আরসা নেতা ও রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ছলিমকে। তিনি উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের নুর বশরের ছেলে। এরপর যথাক্রমে আছে একই ক্যাম্পের শওকত উল্লাহ, মোহাম্মদ সালাম, জিয়াউর রহমান, মো. ইলিয়াছ, মো. আজিজুল হক, মোর্শেদ প্রকাশ মুর্শিদ, নুর মোহাম্মদ, আনাস, নজিম উদ্দিন, আবুল কালাম প্রকাশ আবু, হামিদ হোসেন, সিরাজুল মোস্তফা ওরফে সিরাজুল্লাহ ওরফে সিরাজ, মৌলভি মো. জকোরিয়া, খাইরুল আমিন, মাস্টার আবদুর রহিম ওরফে রকিম, জাহিদ হোসেন ওরফে লালু, ফয়েজ উল্লাহ, ছমির উদ্দিন ওরফে ছমি উদ্দিন ওরফে নুর কামাল, সালেহ আহমদ, মোজাম্মেল ওরফে লাল বদিয়া, তোফাইল, মাস্টার শফি আলম, আবদুস সালাম ওরফে জাকের মুরব্বি, জকির, হাফেজ আয়াছ, মাস্টার কাশিম, মাস্টার শুক্কুর আলম ও মোস্তফা কামাল।