‘আমি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। কখনো কোনো ব্যক্তিকে আঘাত করে বা ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলিনি, লিখিনি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আমি কথা বলব, লেখালেখি চালিয়ে যাব।’ কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে এসব কথা বলেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ঝুমন দাশের মুঠোফোনটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জব্দ আছে। এ জন্য তাঁর মা নীভা রানী দাশের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ৬ মাস ১২ দিন কারাবাসের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে।
আলাপকালে ঝুমন দাশ বলেন, ‘জেল থেকে বাইরে কী হচ্ছে বুঝতে পারিনি। তবে এখন জানতে পারছি, আমার সংকটে দেশ-বিদেশের কত মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা আমার পক্ষে কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার বা আমার পরিবারের নেই।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ঝুমন দাশ গত ১৭ মার্চ থেকে কারাগারে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। ১৬ মার্চ হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ১৭ মার্চ সকালে আশপাশের তিনটি গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দাদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। ঝুমন দাশকে ১৬ মার্চ রাতেই আটক করে পুলিশ। এরপর ২২ মার্চ শাল্লা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ।
মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ঝুমন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো ব্যক্তি বা ধর্মের বিরুদ্ধে কখনো লিখেছি, এটা কেউ দেখাতে পারবে না। আমি সব ধর্মকে সম্মান করি। আমি জেলে থাকার সময় আমার নামে ১৭টি ফেসবুক আইডি সচল ছিল। এসব তো আমি করিনি। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ এসব করেছে। আমি আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদেও এটা বলেছি। আমি মিথ্যা বলি না। তবে আমার বিরুদ্ধে করা মামলার এজহারে যে তিনটি ফেসবুক পোস্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে তৃতীয়টি আমার। অন্য দুটি আমার নয়। ঝুমন বলেন, আমি আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালত আমাকে যেসব শর্তে জামিন দিয়েছেন সবগুলো আমি যথাযথভাবে পালন করব।’
আলাপকালে ঝুমন দাশ আরও জানান, তিনি কারাগারে থাকায় পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তিনি ১০ বছর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। পরে নিজেই প্রসাধনসমাগ্রী বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। এখন বেকার। আবার তাঁকে পরিবারের হাল ধরতে হবে। এ জন্য কিছু একটা করবেন। তবে যা–ই করেন, আদালতের নির্দেশনা মেনেই করবেন বলে জানান তিনি।
ঝুমন দাশের পরিবারে মা ছাড়াও স্ত্রী, এক বছর বয়সী ছেলে, এক বড় ভাই ও দুই বোন আছেন। স্ত্রী সুইটি রানী দাশ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়েন। ঝুমনের আয়েই সংসার চলে।
মুক্তির পর কারাফটকে ঝুমনকে বুকে জড়িয়ে মা নীভা রানী দাশ সরকারের কাছে তাঁর ও পরিবারের নিরাপত্তার চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে ঝুমন বলেন, ‘কারাগারে থাকা অবস্থায় সেখানে অনেকেই বলেছে, বের হলে আমার বিপদ হতে পারে। বাড়িতে ফেরার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আমার ও আমার পরিবারের পাশে আছে। আমি তাদের কথায় আস্থাশীল। যদি কখনো প্রয়োজন মনে করি, অবশ্যই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাব।’