জিনসের প্যান্ট ও কোট পরা এক ব্যক্তির হাতে হাতকড়া। দুই চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা। তাঁর সামনের চেয়ারে এক ব্যক্তি। তিনি বলছেন, ‘তোর কী হইছে। কে মারছে। আমি তো তোগে লোক না। তোগে লোক হলে থানায় থাকতে পারতাম। আমি নিক্সন চৌধুরীর লোক।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও চিত্রে এমন কথা বলে নিজের পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি হলেন পরিদর্শক আহাদুজ্জামান। তিনি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এর আগে তিনি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন।
ভিডিওতে হাতকড়া পরা ব্যক্তি হলেন ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আরাফাত। গত সোমবার তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে ভিডিওটি আপলোড করেন। এ ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান।
ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। গত ২০১৪ ও ২০১৮ তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাকে পরাজিত করেন।
শেখ আরাফাত বলেন, গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কাউলিবেড়া এলাকা থেকে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। হাতকড়া পরিয়ে গাড়ির মধ্যে চারজন পুলিশ সদস্য তাঁকে মারধর করেন। পুখরিয়া এলাকায় তাঁকে ডিবি পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তখন তাঁর চোখ বেঁধে ফেলা হয়। নানাভাবে ভয় দেখানো হয়। বলা হয়, ‘তোকে ক্রসফায়ারে দেব। সকালের সূর্য তুই দেখতে পারবি না। আজই তোর শেষ রাত।’
আরাফাত আরও বলেন, রাতে তাঁকে এসপির কার্যালয়ের তিনতলায় ডিবির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে চেয়ারে পিঠমোড়া করে বাঁধা হয়। এরপর তাঁর দুই পায়ে বেতের লাঠি দিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট পেটানো হয়। এরপর ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার পেটানো হয়। ডিবির তৎকালীন ওসি আহাদুজ্জামান আসেন। সেই ঘটনার ভিডিও তিনি আপলোড করেছেন।
১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আহাদুজ্জামান বলছেন, ‘...আমি তো তোগে লোক না। তোগে লোক হলে (ভাঙ্গায়) থানায় থাকতে পারতাম।’
এর আগে আরাফাত আমাকে বলেছিলেন, আমি নাকি নিক্সন চৌধুরীর লোক। এর উত্তরে আমি বলেছি, নিক্সন চৌধুরীর লোক হলে আমি থানাতেই থাকতে পারতাম।আহাদুজ্জামান, পরিদর্শক, চন্দ্রপাড়া ফাঁড়ি, সদরপুর
আহাদুজ্জামান ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত ডিবির ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তাঁকে সদরপুরের চন্দ্রপাড়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
জানতে চাইলে পরিদর্শক আহাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি আরাফাতকে চোখ বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি। তাঁকে মারধর করা হয়েছে কি না, জানি না। এর আগে আরাফাত আমাকে বলেছিলেন, আমি নাকি নিক্সন চৌধুরীর লোক। এর উত্তরে আমি বলেছি, নিক্সন চৌধুরীর লোক হলে আমি থানাতেই থাকতে পারতাম।’
ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। গত ২০১৪ ও ২০১৮ তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাকে পরাজিত করেন। ভাঙ্গায় পুলিশ জাফর উল্যার সমর্থকদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার, মারধর ও মামলা দেয় বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগসহ সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তাঁরা।
ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ওই ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার রাতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জামাল পাশাকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাশেদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) গাজী রবিউল ইসলাম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জামাল পাশা বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন–সংক্রান্ত চিঠি তিনি আজ বুধবার পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করবে কমিটি।