ঢাবি ছাত্রের লাশ উদ্ধার

‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, হত্যা করা হয়েছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুব আলমের মায়ের আহাজারি। আজ শুক্রবার সকালে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌর এলাকার সাখিদার পাড়া মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে ট্রেনের ছাদে একটি ছবি ফেসবুকে দিয়েছিল। ওই ছবিতে আমার ছেলের পেছনে একজনকে দেখা গেছে। ওকে খুঁজে পেলেই আমার ছেলের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র মাহবুব আলমের মৃত্যু নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর মা মৌলুদা খাতুন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ সেতু থেকে মাহবুবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌর এলাকার সাখিদার পাড়া মহল্লায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি আনা হয়।

মেধাবী শিক্ষার্থী মাহবুব আলম দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, এমন কথা আত্মীয়স্বজন, সহপাঠীরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, মাহবুব আলমকে হত্যা করা হয়েছে।

মাহবুব ক্ষেতলাল পৌর এলাকার সাখিদার পাড়া মহল্লার ব্যবসায়ী ও জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ওরফে মিঠুর ছেলে। দুই ভাইবোনের মধ্যে মাহবুব আলম বড়। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ শুক্রবার সকালে মাহবুবদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির পাশে লাশ রাখা হয়েছে। লোকজন শেষবারের মতো দেখতে সেখানে ভিড় করছেন। বাড়ির ফটকের সামনে বাবা আবদুল হান্নান ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। লোকজন তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাড়ির ভেতর মাহবুবের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

সর্বশেষ এই ছবিই ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন মাহবুব আলম। পেছনে থাকা অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহ করছে পরিবার

সহপাঠীরা বলছেন, মাহবুব আলম খুবই সহজ-সরল ছিলেন। কয়েক দিন আগে শরীয়তপুরে এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে কুষ্টিয়ায় বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গত বুধবার বন্ধু এমরানের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বের হন। ওই রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেনের ছাদের ওপর থাকা অবস্থায় মাহবুব আলম তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই পোস্টে লেখা ছিল, ‘অফ টু কুষ্টিয়া। কঠিন তবুও আনন্দঘন, মাঝপথে জুটেছিল, অপরিচিত সঙ্গী।’

ওই ছবিতে ট্রেনের ছাদে মাহবুব আলমের পেছনে আরও এক তরুণকে দেখা গেছে। তাঁকে পরিবার কিংবা সহপাঠী কেউ চিনতে পারছেন না। ঘটনার পর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাহবুব আলমের কাছে টাকা কম থাকলেও তাঁর কাছে দুটি দামি মুঠোফোন ছিল। তবে দুটি মুঠোফোন অক্ষত ছিল।

মাহবুবের সহপাঠী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র এমরান হোসেন বলেন, ‘মাহবুব আমার কাছে ৫০০ টাকা নিয়ে বলেছিল সে কুষ্টিয়া যাবে। আমাদের বন্ধুরা কেউ তার সঙ্গে যাইনি। আমাদের ধারণা, মাহবুব খুব সহজ-সরল ছিল। সে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের ছেলে নয়। কেউ তার সরলতার সুযোগ নিয়ে ট্রেনের ছাদে তুলে হত্যা করতে পারে। কারণ, মাহবুবের মাথার পেছনের আঘাতটি ধারালো অস্ত্রের বলে ধারণা করছি। আমরা মাহবুবের মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।’

মাহবুবের মা মৌলুদা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বুধবার রাত নয়টার দিকে মুঠোফোনে মাহবুবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল “মা আমি কুষ্টিয়া যাচ্ছি।” কার সঙ্গে যাচ্ছ বলতেই বলল, “অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে।” এরপর রাত ১২টায় আবার ফোন দিয়েছিলাম। ফোনের কলের আর রিসিভ করেনি। বৃহস্পতিবার সকালে খবর এল মাহবুব আর নেই।’

মাহবুবের বাবা আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছে, সেটি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ছেলের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।’

মাহবুবের জানাজায় জয়পুরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীসহ এলাকার মানুষ শরিক হয়েছিলেন।
জয়পুরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, ‘আবদুল হান্নানের একমাত্র ছেলে মাহবুব আলমের অকালমৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এটি সত্যিই বেদনাদায়ক। আমরা মেধাবী শিক্ষার্থী মাহবুব আলমের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।’