প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ

‘আমাদের পেটের খবর প্রথম আলো নিয়েছে, আমরা খুব খুশি’

বৃষ্টির মধ্যেই খাদ্য সহায়তা নিতে হাজির হয়েছেন ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। আজ শুক্রবার সকালে টেকনাফের সেন্ট মার্টিনে
ছবি: প্রথম আলো

ভোররাত থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছিল দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্ট মার্টিনে। এর মধ্যেই অসহায় কিছু নারী-পুরুষ জড়ো হন দ্বীপের আবাসিক হোটেল সি সেন-এর সামনে। একপর্যায়ে থেমে যায় বৃষ্টি। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জড়ো হওয়া মানুষগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দেওয়া এই খাদ্যসহায়তা পেয়ে দ্বীপের ডেইলপাড়ার গৃহবধূ আমিনা বেগম বলেন, ‘চাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, মাস্কসহ একটি বস্তা পেয়েছি। আমাদের পেটের খবর অন্ততপক্ষে প্রথম আলো নিয়েছে। এসব পেয়ে আমরা খুব খুশি।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার সময় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন সেন্ট মার্টিন বিএন ইসলামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক শাহজালাল সরকার, সেন্ট মার্টিন ইউপির সদস্য হাবিবুর রহমান খান, সেন্ট মার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম, সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ প্রমুখ।

দ্বীপের মাঝেরপাড়ার ৬৫ বছর বয়স্ক হোসেন বানু খাদ্যসামগ্রী নিতে এসে বললেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলেমেয়ে আলাদা আলাদা সংসার করছিলেন। ছেলেরা মাঝেমধ্যে কিছু দিলে তিনি খেতেন। অথচ ঘূর্ণিঝড় যাওয়ার পর থেকে তিনি ছেলেদের কাছ থেকে কিছুই পাননি। আজ খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন। এসব দিয়ে কিছুদিন ভালোভাবে পেট ভরে খেতে পারবেন। তিনি প্রথম আলোর জন্য দোয়া করেন।

প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্য সহায়তা পেয়ে হাসি ফুটেছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মুখে। আজ শুক্রবার টেকনাফের সেন্ট মার্টিনে

দ্বীপের গলাচিপার বাসিন্দা ও জেলে নবী হোসেন বলেন, ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। এ উপলক্ষে সরকারের চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত পাননি। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড করে দিয়েছেন। বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ সাত সদস্যের পরিবার। দুই বেলা খাবার জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন সময় প্রথম আলো ট্রাস্ট এগিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’

সেন্ট মার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সেন্ট মার্টিন। দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপটিকে বঙ্গোপসাগরের কবল থেকে রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ চান তিনি।

সেন্ট মার্টিন বিএন ইসলামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক শাহ জালাল সরকার বলেন, প্রথম আলো সব সময় প্রথম। এ দ্বীপের ইতিহাসে সর্বপ্রথম চলতি বছর এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইসমাইলকে প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তির জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আরও একটি নজির স্থাপন করেছেন।