■ এলজিইডি বলছে, তারা সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।
■ সওজ বিভাগ বলছে, তারা সড়কটি হস্তান্তরের কাগজ এখনো পায়নি।
এলজিইডি ও সওজের ঠেলাঠেলির কারণে সড়কটি যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে সড়কটি কেউ সংস্কার করছে না।
বরগুনার আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। এ কারণে সড়কটির পিচ ও খোয়া উঠে গেছে। অনেক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। এ অবস্থায় চার মাস আগে সড়কটি দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বলছে, তারা সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাই সড়কটি সওজের সংস্কার করার কথা। কিন্তু সওজ বলছে, তারা সড়কটি হস্তান্তরের কাগজ এখনো পায়নি। এ কারণে সংস্কার করতে পারছে না।
এলাকার লোকজন বলছেন, এলজিইডি ও সওজের ঠেলাঠেলির কারণে সড়কটি যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে সড়কটি কেউ সংস্কার করছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারের পাশ থেকে তালতলীর ফকিরহাট পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার। এটি দিয়ে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন আমতলী ও তালতলী উপজেলার মানুষ। সোনাকাটা ইকোপার্ক ও শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি।
আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ব্যবসার মালামাল পরিবহনে বেশি টাকা ও সময় লাগছে। এতে ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। এটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।
চার মাস ধরে এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না।মো. হাসান মৃধা, কার্যকরী সদস্য, জেলা বাস মালিক সমিতি, বরগুনা
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পের অধীনে সড়কটি নির্মাণ করে এলজিইডি। এরপর ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এটি সর্বশেষ সংস্কার করা হয়। এরপর এটি সওজের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ কারণে এটি আর সংস্কার করা হয়নি।
এলাকার লোকজন বলছেন, সড়কটি দিয়ে আমতলী ও তালতলীর লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করে। এই সড়কের মানিকঝুড়ি থেকে কচুপাত্রা সেতু পর্যন্ত আট কিলোমিটার এবং কড়ইবাড়িয়া বাজার থেকে তালতলী হাসপাতাল পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরা। ২০–৩০ গজ পরপর বড় বড় গর্ত। এসব খানাখন্দে গাড়ি আটকে গিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ কারণে চার মাস আগে সড়কটি দিয়ে ঢাকা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে তালতলীর বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক সমিতি। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচল করছে।
বাসচালক মজিবুর রহমান বলেন, এ সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় বাস গর্তে আটকে যেত। অনেক সময় বাসের যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ কারণে এ পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ।
জেলা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সদস্য মো. হাসান মৃধা বলেন, চার মাস ধরে এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির ইট-খোয়া উঠে মাটি বের হয়ে পড়েছে। দেখে মনে হবে, এটি যেন কাঁচা রাস্তা। সড়কের মানিকঝুড়ি থেকে কচুপাত্রা সেতু পর্যন্ত আট কিলোমিটার অংশে রয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। কড়ইবাড়িয়া বাজার থেকে তালতলী হাসপাতাল পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারেও রয়েছে খানাখন্দ।
আমতলীর তারিকাটা এলাকার মোতালেব মিয়া, নশা হাওলাদার, মোশাররফ হোসেন, কবির উদ্দিন ও শহীদুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। এরপরও কেউ সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
জানতে চাইলে এলজিইডির জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফোরকান আহম্মেদ খান বলেন, সড়কটি সওজের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা এটির সংস্কারকাজ করবে।
তবে সওজের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হায়দার কামরুজ্জামান বলেন, ‘সড়কটি সওজের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো তা করা হয়নি। তাই আমরা সংস্কার করতে পারছি না।’