আবার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আতঙ্কে সুনামগঞ্জের মানুষ

সুনামগঞ্জে বন্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পানিবন্দী মানুষ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে মাঝখানে এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে গত সোমবার থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জে উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে। দুই দিনে সুরমা নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই ঢল নামছে। আবার একই সঙ্গে সুনামগঞ্জেও বৃষ্টি হওয়ায় পানি কিছুটা বাড়ছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অবনতি হবে, এমন কোনো পূর্বাভাস নেই।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। ২৪ ঘণ্টায় এখানে ২৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। দিরাই উপজেলায় পুরাতন সুরমা নদীর পানি আছে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপরে।

আজ বুধবার সকাল নয়টা সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পাশে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৬৬ সেন্টিমিটার। গতকাল মঙ্গলবার একই সময়ে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার। সোমবার সকালে পানি উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। এই হিসাবে দুই দিনে পানি বেড়েছে ২২ সেন্টিমিটার। তবে সুনামগঞ্জ শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে।

সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৯৬ মিলিমিটার। সোমবার ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২০০ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জে সুরমা, জাদুকাটা, চিলাই, খাসিয়ামারা, চেলাসহ জেলার বিভিন্ন নদী-নদীর পানি আবার বাড়ছে।

সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা দেখা দেয়। একই সময়ে ব্যাপক বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামে। এরপর ২০ জুন থেকে টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টি ছিল না। এতে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। কিন্তু সোমবার থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে নামছে পাহাড়ি ঢল। এবার সোমবার রাত থেকে ঢল নামে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা চিলাই ও খাসিয়ামারা নদী হয়ে। তাই সীমান্তঘেঁষা এই উপজেলার কোনো কোনো এলাকায় পানি বেড়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হালিম (বীর প্রতীক) জানান, সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দিনে ঢল নেমেছে। এখন ঢলের পানি নামছে। তবে সেটা ধীরে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা প্রথম আলোকে বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা এখনো বন্যাকবলিত। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি আছে। এখন বৃষ্টি হওয়ায় কোথাও কোথাও আবার পানি বাড়ছে। তাঁরা বন্যার্তদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা পারভেজ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘যেভাবে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে আমরা আতঙ্কিত; আবার না পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়।’ শহরের মধ্যবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ দুলন মিয়া বলেন, মানুষের মধ্যে আবারও ভয় কাজ করছে। আবার পানি বেড়ে সর্বত্র পানিতে প্লাবিত হয় কি না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহ প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতেই সব জায়গা বন্যার পানিতে ভরে আছে। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি বাড়বে। আবার উজানেও কিছু বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পূর্বাভাস নেই।

জেলার জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় এখনো মানুষ পানিবন্দী। এসব উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে আছে বন্যার পানি। জেলা উপজেলায় মূল সড়কগুলো জেগে উঠলেও ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে প্লাবিত আছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নানা রোগবালাই দেখা দিচ্ছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জেলার দু-তিনটি উপজেলায় এখনো পানি আছে। তবে পরিস্থিতি সব স্থানেই উন্নতি হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ১৯ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, সাড়ে ১৪ কেজির ২৮ হাজার বস্তা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিল থেকে আরও ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত জেলায় ২ লাখ ৪০ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।