দেয়াল ঘেঁষে রাখা হতো ময়লা-আবর্জনা। তা পরিষ্কার করে দেয়ালের নামকরণ করা হয়েছে ‘একুশ’। আর ওই দেয়ালেই গড়ে তোলা হয়েছে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার। একুশের স্মরণে দেয়ালে তাক তৈরি করে রাখা হয়েছে ২১টি বই। পথচারীরা দাঁড়িয়ে বই পড়ার সুযোগ পাবেন ওই পাঠাগারে।
পথের কাছে উন্মুক্ত এ পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের দেয়ালে। গতকাল শুক্রবার ওই উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান ও সদরের ইউএনও মনদীপ ঘরাই।
ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে দেয়ালের নামকরণ করা হয়েছে ‘একুশ’। ওই দেয়ালেই গড়ে তোলা হয়েছে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার। একুশের স্মরণে দেয়ালে তাক তৈরি করে রাখা হয়েছে ২১টি বই।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলা শহরের পালং বাজার এলাকায় উপজেলা পরিষদ ও নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন অবস্থিত। বাসভবনের প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশ দিয়ে পালং বাজার সড়ক। সড়কে ঘেঁষা বাসভবনের সীমানাপ্রাচীর। পালং বাজারের ব্যবসায়ীরা ওই সীমানাপ্রাচীরের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলতেন। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে মানুষের চলাচলেও অসুবিধা হতো। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি হলে নজরে আসে সদর ইউএনও মনদীপ ঘরাইয়ের। তিনি গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ওই স্থানের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেন। পরিচ্ছন্ন করার পর দেয়ালে নতুন রং করা হয়। আর যাতে কেউ জায়গাটিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে নষ্ট না করতে পারে, তার জন্য উন্মুক্ত পাঠাগার করার উদ্যোগ নেন।
ইউএনওর বাসভবনের পশ্চিম পাশে সীমানাপ্রাচীরের দক্ষিণ দিকে দেয়ালের ২০ ফুট জায়গা উন্মুক্ত পাঠাগার নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। ওই স্থানে কাঠ দিয়ে তিনটি তাক নির্মাণ করা হয়। আর ওই তাকে রাখা হয় ২১টি বই। উন্মুক্ত পাঠাগারটিতে পথচারীদের বই পড়ার আহ্বান জানানো হয়।
ভাষার মাসে আমার এক সহকর্মীর দেয়ালে উন্মুক্ত পাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ আমাদের অভিভূত করেছে। অন্ধকার দূর করে আলোর পথে চলতে হবে। আর আলোকিত হতে হলে বইকে নিত্যদিনের সঙ্গী করতে হবে।মো. পারভেজ হাসান, জেলা প্রশাসক, শরীয়তপুর
ইউএনওর বাসভবনের দেয়ালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপের বিষয়ে ফেসবুকে দৃষ্টি আকর্ষণকারীদের একজন শরীয়তপুর শহরের তুলাশার এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন সাজিদ। তিনি বলেন, ‘সদর ইউএনওর বাসভবনের দেয়াল ঘেঁষে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে ছিল। কেউ তা পরিষ্কার করছিল না। এর আগে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে সদরের নবাগত ইউএনও মনদীপ ঘরাই বিভিন্ন ভালো উদ্যোগ নেন। সেই কারণেই ওই স্থানের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করি। তাঁর নজরে এলে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ওই স্থানটি পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আমাদের চমকে দিয়ে তিনি ওই স্থানে উন্মুক্ত পাঠাগার নির্মাণ করবেন, তা ভাবতেও পারিনি।’
ইউএনও মনদীপ ঘরাই প্রথম আলোকে বলেন, ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে যে স্থানটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ বিরক্ত হতো, আজ সেখানে জ্ঞানচর্চার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ পরিবর্তনটুকু আনতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। উন্মুক্ত এ পাঠাগারে ২১ জন লেখকের বই রয়েছে। কোনো পাঠক চাইলে বাড়িতে নিয়েও বই পড়তে পারবেন। পড়া শেষে তাঁকে পাঠাগারে বই রেখে যেতে হবে। আপাতত আমি পরিচিত ও স্বজনদের সহায়তায় পাঠাগারটি চালু করেছি। জেলা প্রশাসক স্যারও উৎসাহ দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন।’
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সাহিত্যিক শ্যামসুন্দর দেবনাথ বলেন, নানা কারণে বই পড়ার পরিবেশ এখন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এমন একটি পরিবেশে পথের কাছে উন্মুক্ত পাঠাগার একটি অসাধারণ উদ্যোগ। ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থানে পাঠাগার নির্মাণ—এটা নাগরিকদের মনোজগতেও পরিবর্তন আনবে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাষার মাসে আমার এক সহকর্মীর দেয়ালে উন্মুক্ত পাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ আমাদের অভিভূত করেছে। অন্ধকার দূর করে আলোর পথে চলতে হবে। আর আলোকিত হতে হলে বইকে নিত্যদিনের সঙ্গী করতে হবে। এমন আলোকিত অভিযাত্রায় জেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে।’