নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার ফটক আটকে সামনের রাস্তায় আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে তিনি থানার ফটকে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন।
সেখানে অবস্থানকালে কাদের মির্জা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁর বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, তাঁর দাবি অনুযায়ী নোয়াখালীর সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনীর সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর অপরাজনীতি বন্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এবং নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক, পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল হককে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ হবে না। তিনি রাজপথ ছেড়ে যাবেন না।
কাদের মির্জা পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থানার সামনে অবস্থান করার ঘোষণা দেন। তিনি তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সবাই আগামীকাল সকাল ১০টায় আসবেন। আসার সময় লাঠি নিয়ে আসবেন। আমি সবার হাতে লাঠি দেখতে চাই। এখানে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে লাঠি নিয়ে বের হতে হবে। অস্ত্রের দরকার নেই। লাঠি হলেই চলবে। কাউকে মারার (হত্যা) দরকার নেই। শুধু হাঁটুর নিচে পেটাবেন।’
কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটক বন্ধ করে সামনের বসুরহাট-চাপরাশিরহাট সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালনের কারণে কোনো মানুষ থানায় ঢুকতে পারেননি। একইভাবে থানার সামনের সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, থানার ফটকে কাদের মির্জার অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে থানার ভেতরেই অবস্থান করেন পুলিশ সদস্যরা। প্রধান ফটক বন্ধ করে সামনের বসুরহাট-চাপরাশিরহাট সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালনের কারণে কোনো মানুষ থানায় ঢুকতে পারেননি। একইভাবে থানার সামনের সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে মানুষকে বাধ্য বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে যেতে হয়।
কাদের মির্জার অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য লাইভ প্রচার করেন। এ সময় কাদের মির্জা বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি, ওসি-তদন্তকে আমি এই থানায় এনেছি। এখন তাঁরা থানায় বসে বসে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। আজকে আমাকে হত্যা করার জন্য এঁরাসহ নোয়াখালীর ডিসি-এসপি, একরাম (সাংসদ একরামুল করিম) এবং নিজাম হাজারী (সাংসদ) যৌথভাবে আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন।’
থানার ফটকে অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা কাদের মির্জা থানার ফটকে অবস্থান করেন। এ সময় থানার পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ওসি বলেন, কাদের মির্জা দীর্ঘ সময় বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় তিনি আগামীকাল থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি নেতা-কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজির থাকতে বলেন।
সেতুমন্ত্রীর ভাইয়ের দফায় দফায় থানার ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি অবস্থান নিচ্ছেন, আগেও নিয়েছেন। উনার কি দাবি আপনারা উনাকে জিজ্ঞেস করেন।’
কাদের মির্জা আপনি, ওসি, পরিদর্শকের (তদন্ত) প্রত্যাহার চেয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। আপনারা এ বিষয়ে নীরব রয়েছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘কাজগুলো ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না, এটার সিদ্ধান্ত চলে আসবে। তখন পরিস্থিতি বোঝা যাবে কী হয়।’