রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আন্দোলনের এক দিনের মাথায় ফের শিক্ষার্থীকে হলের আসন থেকে তাড়াল ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের অব্যাহত সিট–বাণিজ্য ও দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন। সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ। সেখানে তাদের পছন্দের এক ছাত্রকে তুলে দিয়ে আবাসিক ওই শিক্ষার্থীকে হলের অন্য একটি কক্ষে বেড ভাগাভাগি করে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হল প্রাধ্যক্ষ দাবি করছেন, হল প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজিব কুমার। তিনি বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নবাব আবদুল লতিফ হলের ২০৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী তিনি। ওই কক্ষে তাঁর আসনে একই শিক্ষাবর্ষের ছাত্রলীগের পছন্দের এক শিক্ষার্থীকে তোলা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হলে আসন দখল-বাণিজ্য ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানির প্রতিবাদে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। তাঁরা সেদিন বলেছেন, হলগুলোতে ছাত্রলীগ ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। তারা হল থেকে বৈধ শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে নামিয়ে দিচ্ছে। এ রকম বহু শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা ছাত্রলীগের অত্যাচারে নীরবে হল ত্যাগ করেছেন। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের এমন আন্দোলনের পরদিনই নিজের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হল সজিব কুমারকে।

সজিব কুমার আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। তাঁর বাবা সুনীল মণ্ডল তিন বছর ধরে হার্টের অসুখে ভুগছেন। মা সুলকী মণ্ডলও অসুস্থ। তিনিও সংসারে তেমন কাজ করতে পারেন না। তাঁরা দুই ভাই। বড়ভাই সবুজ কুমার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সেখানে টিউশনি করে সংসার চালান। সজিবও রাজশাহীতে টিউশনি করে চলেন। এ কারণে মেসে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না তাঁর। কয়েক মাস আগে তিনি হলে আসন পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। ৪ মাস ধরে হলের ২০৪ নম্বর কক্ষে তিনি এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন। পরে বড় ভাই চলে গেলে ওই কক্ষ তাঁর নামে বরাদ্দ দেয় হল প্রশাসন।

সজিব কুমার বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন তাঁকে ডেকে নিয়ে হলের ৩৩২ নম্বর কক্ষে অন্যজনের সঙ্গে বিছানা ভাগাভাগি করে থাকতে বলেন। সজিব আপত্তি করলে তাঁকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। যদি সজিব বের হয়ে না যান, তবে তাঁর (শামীম) অনুসারীরা তাঁকে বের করে দেবেন বলে হুমকি দেন তিনি। তখন সেখানে উপস্থিত তৌহিদ নামের একজন বলেন, ‘তোকে বের করে দিলে কী হবে? সর্বোচ্চ একটা নিউজ হবে, এ ছাড়া আমাদের কিছুই হবে না।’

সজিব বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁর বরাদ্দকৃত কক্ষে এসে বিছানাপত্র সব নিচে ফেলে দেন এবং সেখানে অন্য একজনকে উঠিয়ে দেন। পরে তিনি রাত ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে অন্য একজন বন্ধুর কক্ষে গিয়ে ঘুমান। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষকে ফোন করে বিষয়টি জানান তিনি। প্রাধ্যক্ষ ছাত্রলীগের দেখানো ৩৩২ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন তাঁকে। প্রাধ্যক্ষ উল্টো বলেন, হল প্রশাসন চাইলে আবাসিকতা বাতিলের ক্ষমতা রাখে। পরে তিনি ফোন রেখে দেন। সজিব বলেন, তিনি তাঁর বরাদ্দকৃত কক্ষ থেকে জীবন থাকতে নামবেন না। কেন তাঁর সঙ্গে এমন অন্যায় হবে। তিনি তো নিয়ম অনুযায়ীই হলে উঠেছেন।

এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তাঁর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

হলের প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বেডিংপত্র ফেলে দেওয়া হয়নি। আর এটা রাতেই সমাধান হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে ভালো একটি সিট দেওয়া হবে। আপাতত হলেই আছে।

ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীর বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে নিজের এমন অবস্থান ছাত্রলীগের চাপের কারণে নয় মন্তব্য করে প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুর বলেন, ‘না, ছাত্রলীগের কারণে না। এটা নিজে থেকেই আরকি। এখানে (২০৪ নম্বর কক্ষ) অন্য একজন ছেলে ছিল। এখন হল প্রভোস্ট যেকোনো সময় যে কাউকে শিফট করতে পারে। এটা আমার সুবিধার্থে করে দিলাম। অসুবিধা নাই ও ওখানে থাকুক। কোনো প্রবলেম হলে যোগাযোগ করুক। তাঁকে একটা ভালো সিট দেওয়া হবে।’