শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে উপাচার্য, পরে আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে ঢুকে পড়েন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে তিনি উপাচার্য ভবন থেকে বের হয়ে ডিনদের এক সভায় যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার দাবি, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করেই উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চালান। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে থাকা কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাঁকে আগলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে নিয়ে যান।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাঁকে দেখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য স্লোগান দিয়ে পথ অবরোধ করেছিলেন। উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক এখন আইসিটি ভবনের ভেতরে আছেন। বাইরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী, আজ বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও প্রক্টর আলমগীর কবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। এ সময় তাঁরা ছাত্রীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে এক সপ্তাহ সময় চান। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ শব্দ করে শিক্ষকদের আশ্বাস প্রত্যাখান করে তাৎক্ষণিক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা চান। এমন অবস্থায় শিক্ষকেরা কর্মসূচিস্থল ত্যাগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শিক্ষকেরা স্থান ত্যাগের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে তাঁদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চেতনা ৭১’-এর সামনে থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। এ সময় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ডিনদের এক সভায় অংশ নেওয়ার জন্য নিচে নামলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাঁর পথ অবরোধ করেন। তখন আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে উপাচার্যের সঙ্গে থাকা কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাঁকে আগলে আইসিটি ভবনে নিয়ে যান।

বিকেল সোয়া চারটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনের সদর দরজায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নেওয়ার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। শিক্ষক সমিতিসহ সব বিভাগের প্রধানেরা কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মানার আশ্বাস দেন। তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন। এরপর উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। উপাচার্যকে রক্ষা করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হামলায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আহত হয়েছেন। এতে তাঁরা খুবই মর্মাহত।

উপাচার্যের সঙ্গে থাকা কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাঁকে আগলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে নিয়ে যান

এর আগে আজ সকাল পৌনে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের অর্ধশতাধিক ছাত্রী তিন দফা দাবিতে গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করে তিন দফা দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে অনেক ছাত্রী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে যোগ দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস–পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন করছেন হলের ছাত্রীরা।