চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে মারা গেছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শাকিল তরফদার। ওই খবর পরিবারের প্রায় সবাই জানলেও শুধু জানেন না তাঁর মা জেসমিন বেগম। তাঁকে খবরটি জানানো হয়নি।
শাকিল চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে চাকরি করতেন। গতকাল রোববার বিকেলে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন শাকিল। এরপর পাল্টে গেছে ওই বাড়ির চিত্র।
শাকিল তরফদারের বাড়ি বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের শুকদাড়া গ্রামে। খুলনা শহর থেকে তাঁদের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। গতকাল রাত আটটার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শাকিলের মা বাড়ির উঠানে একটি চেয়ারে বসে আছেন, হাতে তসবিহ। মাঝেমধ্যে কেঁদে কেঁদে বলে উঠছেন, ‘আল্লাহ, তুমি শাকিলকে দ্রুত সুস্থ করে দাও।’ পাশের আরেকটি চেয়ারে বসে আছেন শাকিলের বাবা সাত্তার তরফদার।
বাড়িতে ঢোকার আগেই একজন জানিয়ে দেন, শাকিলের মা ছেলের মৃত্যুর কথা জানেন না। শাকিলরা তিন ভাই। সবার ছোট শাকিল। বড় ও মেজ ভাই বিবাহিত। বড় ভাই আসাদুজ্জামান তরফদার বাড়িতেই আছেন। আসাদুজ্জামান বটিয়াঘাটা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করেন। মেজ ভাই মনিরুজ্জামান তরফদার খবর শোনার পরই সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
শাকিলের বড় ভাই আসাদুজ্জামান বলেন, তাঁদের চাচা কামাল তরফদার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রধান কার্যালয়ে হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনিই ফোন করে তাঁদের জানিয়েছেন, শাকিল মারা গেছেন। তখন খবরটি পরিবারের অন্য সদস্যদের জানানো হলেও মা জেসমিন বেগমকে বিষয়টি তাঁরা জানাননি।
আসাদুজ্জামান বলেন, তাঁদের মা জেসমিন বেগম বেশ অসুস্থ। হঠাৎ করে শাকিলের মৃত্যুর খবর নাও সহ্য করতে পারেন, এ জন্য তাঁকে খবরটি জানানো হয়নি। তাঁকে জানানো হয়েছে, আগুনে শাকিল আহত হয়েছেন। হাসপাতালে আছেন, সুস্থ হয়ে যাবেন।
শাকিলের মা জেসমিন বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আমাকে কত ভালোবাসে! বলে আমাকে হজে নিয়ে যাবে। আল্লাহ, আমাকে এ কোন পরীক্ষায় ফেলল!’
খুলনা আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে পড়াশোনা করতেন শাকিল। ২০১৮ সালের জুন মাসে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ার ফাইটারম্যান পদে চাকরি পান তিনি। প্রথমে বটিয়াঘাটা ফায়ার স্টেশন ও পরে মোংলা ইপিজেডে ফায়ার স্টেশনে চাকরি করতেন। ছয় মাস আগে চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে বদলি হয়ে যান তিনি।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
শাকিলের বাবা সাত্তার তরফদার বলেন, তাঁরা যৌথ পরিবার। শাকিলের অন্য দুই ভাই তেমন আয় করতে পারেন না। শাকিলই পরিবারের অধিকাংশ খরচ বহন করত। শাকিলের মরার খবর তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
আগুন লাগার ঘটনা শোনার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ইউনিটের দুটি দল। তাঁদের কেউ আগুন নেভাতে কনটেইনারে পানি দিচ্ছিলেন, আবার কেউ সঞ্চালন লাইন ঠিক করছিলেন। এমন সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে হতাহত হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ অনেকে। এখন পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের নয়জন কর্মী আছেন।