কক্সবাজারে লাকিং মে চাকমা (১৫) হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আজ সোমবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। দুপুরে শহরের পৌরসভা ভবন চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করে বেসরকারি আটটি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠন।
এ সময় এসব সংগঠনের নেতারা লাকিং মেকে বাড়ি থেকে অপহরণ, ভুয়া সনদে জোর করে ধর্মান্তর, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসি দাবি করেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম, নারী প্রগতি সংঘ, রাখাইন ওমেন ফোরাম, আদিবাসী ছাত্রপরিষদ, তঞ্চইগ্যা-চাকমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল (উখিয়া-টেকনাফ)।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আদিবাসী ফোরামের সহসভাপতি ক্য জ অং, নারী প্রগতি সংঘের পারভীন আকতার, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি দীপক দাশ, শ্রমিক জোট নেতা এ কে ফরিদ আহম্মদ, আদিবাসী ফোরামের কর্মকর্তা মা টিনটিন ও আলো চাকমা, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক অংথেন মারমা, তঞ্চইগ্যা-চাকমা ছাত্র পরিষদের সভাপতি লাতু চাকমা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মিঠুন দাশ প্রমুখ। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি থৈন অং বুবু।
ক্য জ অং বলেন, আতাউল্লাহর নেতৃত্বে চাকমা কিশোরী লাকিং মেকে সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর তাঁকে কুমিল্লায় নিয়ে জোর করে ও বেআইনিভাবে ধর্মান্তর, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ ও পরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে তাঁরা মাঠে নেমেছেন।
লাকিং মে চাকমার বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নে। তাঁর বাবার নাম লাল অং চাকমা। লাকিং মে স্থানীয় শাপলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন।
মা-বাবার দাবি, তাঁদের মেয়ে লাকিং মেকে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করেন। এরপর জোর করে ধর্মান্তর, বিয়ে ও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে।
গত ৯ ডিসেম্বর আতাউল্লাহর ঘরে মারা যান লাকিং মে। মারা যাওয়ার ১২ দিন আগে লাকিং মে জন্ম দেন একটি মেয়ে সন্তানের। আতাউল্লাহর বাড়িও একই ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নুর আহমদ।
আতাউল্লাহর ভাষ্য, অপহরণ নয়, স্বেচ্ছায় তাঁরা বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগে লাকিং মে ধর্মান্তরিত হন। লাকিং মে চাকমার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল হালিমাতুল সাদিয়া। ৯ ডিসেম্বর বিউটি পারলারে যাওয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রুমে গিয়ে সাদিয়া বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
এদিকে লাশ কীভাবে দাফন হবে, তা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এর ফলে লাকিং মের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে।