করোনা টিকা

আগেভাগে টিকাদান হুইপের ইউনিয়নে

ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭ আগস্ট টিকাদান শুরুর কথা থাকলেও পটিয়ার শোভনদণ্ডীতে চালু হয়ে গেছে।

করোনা টিকা
প্রতীকী ছবি

সরকারি হাসপাতালে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭ আগস্ট থেকে করোনা টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বাড়ি পটিয়ার শোভনদণ্ডী ইউনিয়নে গণহারে টিকা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি নির্দেশের তোয়াক্কা না করে এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেন। উপজেলার সব টিকা তাঁরই হেফাজতে থাকে। শুক্রবার থেকে টিকাদান শুরু করেন তিনি।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রবিউল পটিয়া কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। রবিউল দাবি করেন, হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মৌখিক নির্দেশনায় তিনি শুক্রবার থেকে দুই দিন ধরে টিকা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ওখানে টিকা ব্যবস্থাপনায় আওয়ামী লীগ উল্লেখ করে সামশুল হক চৌধুরীর ছবিসংবলিত ব্যানারও টাঙানো হয়। তবে হুইপ তাঁর নির্দেশের বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার পর্যন্ত দুই দিনে প্রায় দুই হাজার মানুষকে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। কথা ছিল ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরুর আগে শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে। শোভনদণ্ডী ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদানের বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপি), সিভিল সার্জন কিংবা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কেউ আগে থেকে জানতেন না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানও বিষয়টি জানতেন না। এ ব্যাপারে বিভাগীয় পরিচালকের দপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে।

জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর প্রথম আলোকে বলেন, কারও নির্দেশনা ছাড়া রবিউল এভাবে টিকা দিতে পারেন না। সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু হবে ৭ আগস্ট। তার আগে নিবন্ধনবিহীন লোকদের টিকা প্রদান ঠিক হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট অজয় দাশকে। অপর দুই সদস্য হলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার মো. নুরুল হায়দার ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান।

জানা গেছে, গত শুক্রবার শোভনদণ্ডী আরফা করিম উচ্চবিদ্যালয়ে এবং গতকাল শনিবার শোভনদণ্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চালানো হয়। বিষয়টি জানার পর শনিবার পটিয়ার ইউএইচএফপি সব্যসাচী নাথ শোভনদণ্ডীর টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শনে যান।

সব্যসাচী নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই টিকাদান সম্পর্কে আমি বা ঊর্ধ্বতন কেউ জানতেন না। সিভিল সার্জনের নির্দেশে আমি এলাকায় গিয়ে দেখেছি টিকা দেওয়া হচ্ছে। রবিউল হোসেন টিকা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে কাল কারণ দর্শানো নোটিশ দেব।’ ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদানের জন্য ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ চলছে বলে তিনি জানান।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শোভনদণ্ডী এলাকার বাসিন্দা। এলাকার লোকজন আমাকে ধরেছে নিবন্ধনের পরও তাঁরা টিকা পাচ্ছেন না। আমি হুইপ স্যারকে (সামশুল হক চৌধুরী) বলতে বলেছি। পরে হুইপ আমাকে বলেছেন, যদি পারি তাহলে ব্যবস্থা করতে। তাই আমি সেখানে গিয়ে দুই দিনে দুই হাজার টিকা দিয়েছি। সবাই নিবন্ধিত। তাঁদের এসএমএস না আসাতে টিকা দিতে পারছিলেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানবিকভাবে সেবামূলক কাজটি করেছি। কোনো আর্থিক বা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নয়।’

এ ব্যাপারে সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘টিকার সঙ্গে আমার কোনো বিষয় নেই। ওটা ডাক্তারদের বিষয়। তবে ৭ তারিখের আগে টিকা দেওয়া তো উচিত নয়। আমি যদি দিতেই বলতাম তাহলে তো কার্যক্রমের উদ্বোধন করতাম। তা ছাড়া শুক্রবার আমি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সভা করে ৭ তারিখ টিকাদান সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’

শোভনদণ্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুল হক বলেন, ‘আমি টিকাদানের ব্যাপারে অবগত নই। আমাকে কেউ জানায়নি। ফেসবুকের মাধ্যমে দেখেছি এখানে টিকা দেওয়া হয়েছে।’