মিসবাহ উদ্দিন, আসাদ উদ্দিন, জাকির হোসেন, হাসান জেবুল, আজাদুর রহমান ও আরমান আহমদ মেয়র প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আরও এক বছর। কিন্তু আওয়ামী লীগের ছয় নেতা মেয়র পদে প্রার্থী হতে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌশলে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, ২০০২ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর সিলেটে এ পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে আসছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। করোনায় ২০২০ সালের ১৫ জুন মারা যান তিনি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান (আজাদ) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ (শিপলু)। প্রয়াত কামরানের অনুপস্থিতিতে তাঁর ছেলে আরমান এবার মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।
আওয়ামী লীগের মহানগর শাখার কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হওয়ার কথা। গেল দুবারের নির্বাচন আওয়ামী লীগ আমলে হলেও দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। সর্বশেষ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ে কোন্দল ও বিভেদের অভিযোগ নেতৃস্থানীয়দের বিরুদ্ধে উঠেছিল। এ ঘটনায় দলের প্রভাবশালী চার নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটি কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছিল।
মেয়র পদে জয় পেতে মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি তৎপরতা চালাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন। সাংগঠনিক এই তৎপরতার মধ্যেই দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরাও নানা কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীর ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকেন। এর বাইরে নগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ পাকাপোক্ত করতে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গে কুশলবিনিময়, নিজ বলয়ের দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
আরমান আহমদ বলেন, ‘জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমার বাবা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মানুষের সেবায় পাশে ছিলেন। আমিও দীর্ঘদিন ধরে মানুষের পাশে আছি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আরও বৃহৎ পরিসরে নগরবাসীর সেবা করতে চাই।’
গত বছরের ৯ নভেম্বর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নগরে বিশাল মহড়া দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের চারবারের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান। তিনি সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। আজাদুর বলেন, ‘গত নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় ছিলাম। দল মনোনয়ন দিলে বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
এ টি এম এ হাসান জেবুল গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে আগামী সিটি নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে আছি। দল এবং দলের বাইরের মানুষের আগ্রহে আমি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।’
রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় মনোনয়নপ্রত্যাশী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনেও আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এখন আমার কাজের ক্ষেত্র, পরিধি এবং সম্পৃক্ততা আরও বেড়েছে। দল সুযোগ দিলে অবশ্যই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেব।’
গত সিটি নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন না পেলেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করেছি। বর্তমান মেয়রের সমালোচিত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সব সময় তৎপর ছিলাম। এবারও আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী।’
মিসবাহ উদ্দিন গত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ দিলে অবশ্যই সফল হব।’