ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়ায় গত শনিবার দুপুরে গরু চুরির চেষ্টার অভিযোগে জনতার হাতে আটকের পর দুই নারীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপকের সঙ্গে।
অপরাধীর অপরাধ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে আইন রয়েছে, রয়েছেন আদালত। কিন্তু প্রায়ই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এটি কখনোই কাম্য নয়। কেউ চুরি করলে তাঁর শাস্তির বিধান আইনে নির্ধারিত আছে। এ ক্ষেত্রে শাস্তি আইনের মাধ্যমে না দিয়ে অন্য কোনোভাবে দিলে তা বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড হবে। এমনটা ঘটলে তা হবে বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী কাজ। এ ধরনের ঘটনা রোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনেক সময় ঘটনার পরপরই মারধর কিংবা চুল কেটে দেওয়াকে তাৎক্ষণিক শাস্তি হিসেবে মনে করা হয়। এর মধ্য দিয়ে শাস্তি দানকারীরা সন্তুষ্ট হতে চান। এই জায়গায় আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, হাতেনাতে ধরা পড়ার ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায়। এই আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিচারের বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। এমনটি করা হলে অপরাধের প্রবণতা কমে যাবে। বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।
অপরাধের পর সামাজিকভাবে শাস্তি দেওয়া একসময় বৈধ ছিল। কিন্তু এখন সেই যুগের পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনের বার্তা সব মহলে পৌঁছে দেওয়ার কাজ রাষ্ট্রকে করতে হবে। আমাদের সমাজে এ বিষয়কে সহজ ও স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয় যে কেউ চুরি করে ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক বিচার করে ফেলতে হবে। আর যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি যদি নারী হন, তাহলে তো কথাই নেই! চুল কেটে দেওয়াসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। এটা একটা রাষ্ট্রে হওয়া উচিত নয়।
একটা সময় আমাদের সামাজিক বিচারপ্রক্রিয়া চালু ছিল। সেটা অনেক আগের কথা। তখন রাষ্ট্রব্যবস্থা এত বৃহৎ আকারে কাজ করত না। এখন রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থা আছে, আইন আছে। সেই প্রক্রিয়ায় বিচারে যেতে হবে। সামাজিক এ অবস্থানের পরিবর্তন করতে হবে। রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিয়ে এই পরিবর্তন করতে হবে।