দীপালি সরকার একজন গৃহিণী। বয়স ৭৭ বছর। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে দুই দিনে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করা ৬৪ জনের মধ্যে তিনি একজন। টিকা নিতে এসে ভীতি পেয়ে বসেছিল তাঁর মনে। চেয়ারে বসার আগে স্থানীয় সাংসদ রেজওয়ান আহম্মদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ তাঁর হাতে ধরিয়ে দেন একটি লাল গোলাপ। গোলাপ পেয়ে তাঁর মুখে স্মিত হাসি।
দীপালির মানসিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন দেখে স্বাস্থ্যকর্মীরাও পরস্পরের দিকে চোখ ঘোরান এবং তাঁদের মুখেও হাসি। এবার আর কথা না বলে চেয়ার টেনে দীপালি বসে গেলেন। স্বাস্থ্যকর্মী সামিনা আক্তার এই সুযোগে মুহূর্তেই টিকা পুশ করার কাজটি সেরে ফেলেন।
স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষের মন থেকে ভীতি দূর করতে উপজেলাটিতে টিকা দেওয়ার আগে গ্রহণকারী ব্যক্তির হাতে গোলাপ দিয়ে এক অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। উদ্যোগটি টিকা গ্রহণকারীরা ভালোভাবে নিয়েছেন। একই সঙ্গে সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাওর-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর বাস। এই জনপদে শিক্ষা কম, কুসংস্কার বেশি। টিকা নিয়েও মাঠঘাটে আছে নানা কুসংস্কার, ভয়ভীতি। আমাদের মনে হয়েছে টিকা গ্রহণকারীদের মন ভালো রাখতে হলে কিছু একটা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে লাল গোলাপ হতে পারে সমাধান। সে জন্যই এই উদ্যোগ।’ উদ্যোগটি কাজে দিচ্ছে বলে মন্তব্য বুলবুল আহমেদের।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, অষ্টগ্রামের জন্য ভ্যাকসিন বরাদ্দ আছে পাঁচ হাজার। প্রথম ডোজটি আড়াই হাজার মানুষের মধ্যে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নিবন্ধনে তেমন আগ্রহ লক্ষ করা যায়নি। দুই দিনে নিবন্ধন হয়েছে ২৭৭ জনের। প্রথম দিনে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সাংসদ রেজওয়ান আহম্মদ। প্রথম দিন টিকা গ্রহণ করেন ৩৫ জন। দ্বিতীয় দিন নেন ২৯ জন।
আজ টিকা গ্রহণের আগে গোলাপ পেয়েছেন উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামুল হক ভূইয়া। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, টিকা পাব কি না, এই নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। টিকা নিতে এসে আবার গোপাল পেয়ে গেলাম। মনটা ফুরফুরা হয়ে গেল।
গোলাপ পেয়ে স্বাস্থ্য সহকারী আলী আকবরেরও ছিল একই আনন্দ অনুভূতি।