কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার রতানী হাওরে শিলাঝড়ে অন্তত ১০০ একর জমির পাকা বোরো ধান ঝরে পড়েছে। একই সঙ্গে হাওরের বসতি এলাকার অন্তত ৩০টি ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এতে ১২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে রতানী হাওরে শিলাঝড় আঘাত হানে। এই ঝড় প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, হাওরের জমি এক ফসলি। মূলত ফসল বলতে বোরো ধান। রতানী হাওরের অবস্থান অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নে। হাওরের পাশ ঘেঁষে গেছে মেঘনা নদী। হাওরটি উপজেলা কৃষি বিভাগের লাউরা ব্লকের অংশ। ব্লকটিতে জমির পরিমাণ ২৫০ হেক্টর। রতানী হাওরে জমির পরিমাণ ১৫০ একর। এর মধ্যে পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ একর জমির ধান।
রতানী হাওর এলাকার কৃষক রওশন রাজ্জাক বোরো আবাদ করেছেন পাঁচ একর জমিতে। দুই দিন পর থেকে ধান কাটা শুরু করবেন, এমন মুহূর্তে ঝড় আঘাত হানল। রওশন বলেন, ‘২৮ ধানে এবার গজব নামছে। শুরুতে একরে ২২ মণ ধান আশা করছিলাম। চিটা হওয়ার পর আশা নামে ১৫ মণে। হিলা (শিলা) ঝড়ে এহন পাঁচ মণ পামু কি না, সন্দেহ।’
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে মজি মিয়া একজন। এবার তিন একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এই ঝড়ে ধান গেল, ঘরও গেল।
গ্রামের লোকজন জানান, শান্তিনগর গ্রামের বেশির ভাগ ঘরের চালা ও বেড়া টিনের, আর খুঁটি সিমেন্টের। ঝড়ে বেশির ভাগ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উড়ে গেছে ৩০টি ঘর। আহত হয়েছেন ১২ জন। আঘাতে বেশ কয়েকটি গরুও আহত হয়েছে।
ঝড় যাঁদের ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে তাঁদের মধ্যে ইদু মিয়া একজন। উড়ে আসা টিনের আঘাতে তিনি আহত হাসপাতাল চিকিৎসাধীন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইদু মিয়া বলেন, ‘বাতাসের বেগে ঘর উড়াইয়া নেওয়ার আগে আমরা চকির ভেতর আশ্রয় নিছিলাম। চোখের সামনে ঘর উড়াইয়া নিতে দেখলাম। আজ থাইক্কা শান্তিনগর গ্রামের বেশির ভাগ মানুষরে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাইতে হইব।’
শিলাঝড়ে রতানী হাওরের ধান ও শান্তিগ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর জেনে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলমাস উদ্দিন। তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তালিকাবদ্ধ করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, তাঁদের ভাগ্য লেখা হয় মূলত বোরো ধানে। ধান গোলায় উঠলে সারা বছর ভাতের কষ্ট থাকে না। আর না উঠলে খেয়ে না খেয়ে জীবন টেনে নিতে হয়। সেদিক দিক দিয়ে রতানী হাওরের কৃষকদের এবার সারা বছর ভাতের কষ্ট পেতে হবে। শুধু ভাতের কষ্ট নয়, একই সঙ্গে পেতে হবে আশ্রয়ের কষ্টও।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলমাস উদ্দিন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, চিটার পর শিলার আঘাত কৃষকদের সহ্য করা কঠিন হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকদের পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।