দীর্ঘ দুই মাস বন্ধ থাকার পর রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে অর্ধেকেরও কম যাত্রী নিয়ে তিনটি ট্রেন রাজশাহী থেকে ছেড়ে গেছে। রাজশাহী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত বিকেলে আসায় এবং ট্রেনের টিকিট বিক্রির সার্ভার চালু হতে রাত হওয়ায় লোকজন প্রথম দিন টিকিট কাটতে পারেনি। এ কারণে প্রথম দিনে যাত্রী অনেক কম।
রাজশাহী থেকে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন নীলফামারীর চিলাহাটির উদ্দেশে রাজশাহী ত্যাগ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে সকাল ৭টায়। ফরিদপুর ভাঙ্গার উদ্দেশে মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ে সকাল আটটায়। এসব ট্রেনে নির্ধারিত যাত্রীর তুলনায় অর্ধেকেরও কম যাত্রী ছিল।
এদিকে গতকাল রোববার রাতেই রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস চালু হয়েছে। আজ সকালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ দেশে আসার পর সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশে বাস–ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। গত ঈদে এ ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকায় নানা দুর্ভোগ নিয়ে লোকজন কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। ঈদ শেষে ভোগান্তি পোহাতে পোহাতে তাঁরা ফের কর্মস্থলে ফিরেছেন। দীর্ঘ দুই মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে গণপরিবহন চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। তবে ট্রেন ও বাস চলার ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
রাজশাহী রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী রেলস্টেশনে সকাল থেকেই কিছুটা ভিড় ছিল। সকাল ছয়টা থেকে আটটার মধ্যে তিনটি ট্রেন ছেড়ে যায় এ স্টেশন থেকে। স্টেশনের বাইরে গেটে রেলওয়ের কর্মকর্তা কড়া নিরাপত্তায় যাত্রীদের টিকিট চেক করে ভেতরে ঢোকান। এরপর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার আগে আরেকবার টিকিট ও মাস্ক পরানোর ব্যাপারে তদারকি করা হয়। ট্রেনে ওঠার আগে প্রত্যেক যাত্রীর হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হয়।
রাজশাহী রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটি মাত্র ১১৫ জন যাত্রী নিয়ে চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এর মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৮৭টি। এখানেও অর্ধেক যাত্রী যাওয়ার কথা ছিল। সকাল সাতটায় ছেড়ে যাওয়া বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের মোট আসনসংখ্যা ছিল ৯৮৮। এর মধ্যে অর্ধেক যাত্রী হিসাবে ৪৯৪টি আসন বিক্রির কথা ছিল। এদিন ছেড়ে যাওয়া এই ট্রেনে যাত্রী ছিল ২৫৫ জন। আর ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে যাত্রী ছিল ২২৫ জন। এর মোট আসন ছিল ৭৮৪ জন। এরও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, অর্ধেক আসনে যাত্রী বসিয়ে অনলাইনে টিকিট কাটার মাধ্যমে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত দুপুরের পর আসে। আর রাত নয়টার পর ট্রেনের অনলাইন টিকিট বিক্রির সার্ভার চালু হয়। সব মিলিয়ে যাত্রীরা আর এত রাতে টিকিট কাটতে পারেনি। তাই আজ কম যাত্রী নিয়ে ট্রেন ছাড়তে হয়েছে।
সকালে রাজশাহী রেলস্টেশনে পরিদর্শনে আসেন পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চালু হওয়া সব ট্রেনের টিকিট অনলাইনে অর্ধেক পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেনে খুব সতর্কভাবে যাত্রীদের তোলা হচ্ছে। মেডিকেল টিমসহ রেলের অন্য কর্মকর্তারা খুব সতর্কভাবে কাজ করছেন।
রাজশাহীতে গতকাল রোববার রাত নয়টা থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ৬০ শতাংশ ভাড়ায় এসব বাস স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলার চেষ্টা করছে। সরকারের বাস চালুর সিদ্ধান্ত আসার পর গতকাল দুপুর থেকে রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকার দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো খুলেছিল। পরে রাত নয়টা থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। আজ সকালেও বাস চলতে দেখা গেছে। বাস কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে যাত্রীরা বাসে উঠছিল। তাদের সবার মুখে মাস্ক ছিল। কর্তৃপক্ষ হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে যাত্রীদের বাসে তোলে।
সকালে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় কয়েকজন যাত্রী ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন পর বাস চালু করায় তাঁদের যাতায়াত খরচ কমেছে। আর পরিবহনশ্রমিকেরা কিছুটা হলেও আয়–রোজগার করতে পারবেন।
ঢাকার উদ্দেশে যাওয়া যাত্রী আবদুল মতিন বলেন, ঢাকায় মাইক্রোবাসে যেতে দেড় হাজার টাকার বেশি লাগত। এখন ৭৫০ টাকা লাগছে। পরিবহন চালু করায় যাত্রীদের অপচয় কম হবে। তাঁর মতে, সঠিক তদারকি থাকলে বাসে স্বাস্থ্যবিধিও মানা সম্ভব।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার মো. মন্টু বলেন, অর্ধেক আসনের যাত্রী তাঁরা সহজেই পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সরকার ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।