অযত্নে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর

পোদ্দারবাড়িখ্যাত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর। সম্প্রতি ঢাকার দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
পোদ্দারবাড়িখ্যাত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর। সম্প্রতি ঢাকার দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে পোদ্দারবাড়িখ্যাত ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর’ সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে। দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়তে পারে।

জানা গেছে, দোহারের পরিত্যক্ত এই পোদ্দারবাড়িতে ১৯৭১ সালে দোহার ও নবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। যুদ্ধকালীন বিভিন্ন এলাকা মুক্তিযোদ্ধারা এসে এখানে প্রশিক্ষণ নিতেন এবং সুসংগঠিত হয়ে অবস্থান করতেন। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা পোদ্দারবাড়িকে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে ইকরাশী গ্রামের আনোয়ার খান মেম্বার এই বাড়ি ইজারা নিয়ে এর প্রায় ৫২ শতাংশ জায়গা দীর্ঘদিন দখল করে রাখেন। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির ইজারা বাতিলের জন্য আবেদন করলে ২০১৫ সালের শেষ দিকে দোহার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল–আমিন লিজ বাতিল করেন এবং ভবন ও জমি দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন। তখন জমির দলিলপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটির রং, নকশা ও কারুকাজ নষ্ট হয়ে গেছে। ভবনের প্রতি তলায় দুটি করে কক্ষ রয়েছে এবং উত্তর–দক্ষিণ দিকে রয়েছে দুটি বড় বারান্দা। ভবনের দোতলার বিভিন্ন অংশের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ভবনের দরজা–জানালা ভাঙাচোরা। ভবনের প্রতিটি কক্ষের মেঝেতে ময়লা–আবর্জনা জমে আছে। এ ছাড়া নিচ ও ওপর তলার দুটি কক্ষে সিগারেটের খালি প্যাকেট, দেশলাই ও মাদক সেবনের ফয়েল পেপারের টুকরা পড়ে আছে। ভবনের দেয়ালের চারপাশে বটগাছ ও আগাছা জন্মেছে। দেয়ালের পলেস্তারা ও ইটগুলো খসে খসে পড়ছে। ভবনের নিচতলা থেকে দোতলায় যাওয়ার জন্য ভেতরে রয়েছে একটি সরু সিঁড়ি। সেটিরও বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবন থেকে ১০-১৫ গজ দূরত্বে রয়েছে পালামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পালামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অখিল বিশ্বাস বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে এই ভবনের ছবি উপজেলা প্রশাসনের কক্ষে টাঙানো আছে। পোদ্দারবাড়িখ্যাত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 

>স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা পোদ্দারবাড়িকে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করেন।

দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পোদ্দারবাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। দোহার উপজেলাকে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ার ক্ষেত্রে এই বাড়ি নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ির সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

দোহার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রজব আলী মোল্লা বলেন, সরকার পোদ্দার প্রাসাদের প্রায় ৫২ শতাংশ জমির দলিলপত্র বুঝিয়ে দিলেও অর্থের অভাবে জাদুঘরটি সংস্কার করা যাচ্ছে না। বর্তমানে ভবনটি জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সন্ধ্যার পর এখানে মাদকসেবীরা আড্ডা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় পোদ্দার প্রাসাদটি সংস্কার করে সংরক্ষণ করা দরকার। 

দোহারের ইউএনও আফরোজা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, পোদ্দার প্রাসাদ অর্পিত সম্পত্তি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের নিজস্ব সম্পত্তি এটা। ভবনটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।