অযত্নে পড়ে আছে ৩ ভবন

সদর ও বোদা উপজেলায় বিলুপ্ত তিনটি ছিটমহলে ভবন তিনটি নির্মাণ করা হয়। এগুলো কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ ছিটমহলের কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে খড় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি

বাইরে থেকে চকচকে দৃষ্টিনন্দন ভবন। ভেতরে কোথাও মুরগির খোপ রাখা হয়েছে। কোথাও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত লাকড়ি ও ধানের খড় স্তূপ করে রাখা। এ চিত্র পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ ছিটমহলের কমিউনিটি সেন্টারের।

নাজিরগঞ্জ ছিটমহলের কমিউনিটি সেন্টারের মতো আরও দুটি বিলুপ্ত ছিটমহলের দুটি কমিউনিটি সেন্টার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর আগে নির্মিত এসব কমিউনিটি সেন্টার অযত্ন–অবহেলা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পঞ্চগড় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের পর পঞ্চগড় জেলার ছোট-বড় ৩৬টি ছিটমহলে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলে ৬০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি এবং একই অর্থবছরে বোদা উপজেলার বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ ছিটমহলে ৫৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে অপর একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়।

এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলার বোদা উপজেলার বিলুপ্ত শালবাড়ি ছিটমহলে ৬১ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। বিলুপ্ত ছিলমহলগুলো বাসিন্দাদের বিভিন্ন সামাজিক ও বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এসব কমিউনিটি সেন্টারগুলো নির্মাণ করে সরকার।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, বিলুপ্ত নাজিরগঞ্জ ছিটমহলের কমিউনিটি সেন্টারটি বাড়ির পাশে হওয়ায় ওই ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান (তৎকালীন ছিটমহলবাসীর ঘোষিত চেয়ারম্যান) আবদুল খালেক তাঁর গৃহস্থালির সামগ্রী সেখানে রেখেছেন। আসবাব ও বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান হয়নি ওই কমিউনিটি সেন্টারে। এমনকি নির্মাণের পর থেকে প্রশাসনের কেউ ওই কমিউনিটি সেন্টারটির খোঁজও নেননি।

অপর দিকে একই উপজেলার বিলুপ্ত শালবাড়ি ছিটমহলের নির্মাণ করা কমিউনিটি সেন্টারটিও অযত্নে পড়ে আছে। একইভাবে সদর উপজেলার বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের কমিউনিটি সেন্টারে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়নি। সেখানে নেই কোনো আসবাব।

বিলুপ্ত শালবাড়ি ছিটমহলের বাসিন্দা বাবুল ইসলাম বলেন, ‘ছিটমহল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমি ছিটমহলের বাসিন্দা হিসেবে এসব উন্নয়নে কমিউনিটি সেন্টার ও ডাকঘরের জন্য এক বিঘা জমি দিয়েছি। এগুলো নির্মাণও হয়েছে। কিন্তু এখন সব পড়ে আছে কোনো কার্যক্রম নেই।’

বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের নেতা মফিজার রহমান বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য আমরা ২২ শতক জমি দিয়েছি। এখন চার বছর ধরে পড়ে আছে কোনো কার্যক্রম নেই। বিদ্যুৎ–সংযোগ না থাকায় ঘরের ভেতরে লাগানো ফ্যানগুলোও (বৈদ্যুতিক পাখা) নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া বৃষ্টি হলেই ছাদের ওপরে পানি লেগে থাকে।’

এ বিষয়ে পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুজ্জামান বলেন, ‘বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোয় নির্মাণ করা কমিউনিটি সেন্টারগুলো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় কমিউনিটিপ্রধান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আমরা হস্তান্তর করেছি। মূলত সচেতনতার অভাবেই এসব কমিউনিটি সেন্টার অবহেলায় পড়ে আছে।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলে নির্মাণ করা কমিউনিটি সেন্টারগুলো চালু করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ওই সব এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এগুলো ব্যবহারের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী বলেন, ‘নির্মাণের পর এসব কমিউনিটি সেন্টার কারও কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আর এগুলোতে বিদ্যুৎ–সংযোগ নিতে গেলে তো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি লাগবে, সেই দায়িত্বশীল ব্যক্তি কে, সেটা আমরা এখনো জানতে পারিনি। আসলে নির্মাণকাজের সময় থাকা অনেক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি এখন পরিবর্তন হয়ে গেছেন। তবে আমরা এগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি এবং এগুলো জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করার ব্যবস্থা করছি।’