চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর সন্ত্রাসী অমিত মুহুরীকে ইটের আঘাতে খুনের ঘটনার অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো পায়নি পুলিশ। গতকাল শনিবার এই হত্যাকাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হয়। ইটটি কারাগারের সেলের মতো সুরক্ষিত জায়গায় (কক্ষ) কীভাবে এল, বন্দী রিপন নাথের সঙ্গে আর কেউ ছিলেন কি না, কারও ইন্ধনে এই ঘটনা কি না—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। অমিত ছিলেন ১৬ মামলার আসামি।
রিপন নাথ নামে এক বন্দীর ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে গত ২৯ মে রাত একটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরীর মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের ৬ নম্বর কক্ষে থাকতেন তাঁরা। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ বাদী হয়ে পরদিন কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে বন্দী রিপন নাথকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে অমিতের বাবা অরুণ মুহুরী অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রামের এক নেতা টাকার বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছেলেকে কারাগারে খুন করিয়েছেন।
ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রিমান্ড শেষে ১১ জুন আসামি রিপন আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে বলা হয়, সেলে ঢোকার পর সিগারেট খাওয়া নিয়ে অমিত মুহুরীর সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। তাঁকে সিগারেট খেতে নিষেধ করেন অমিত। রাতের খাবার খেয়ে যখন শুতে যান তখন অমিত তাঁর পায়ের কাছে শুতে বলেন রিপনকে। এতে ক্ষিপ্ত হন তিনি। রাত ১০টার দিকে অমিত যখন গভীর ঘুমে ছিলেন তখনই সেলে থাকা ইট দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। এতে তাঁর মৃত্যু হয়।
পুলিশের প্রশ্ন, কিন্তু ইটটি সেলে কীভাবে এল? ঘটনার আগে রিপন এনেছেন নাকি কেউ তাঁকে দিয়ে গেছেন? দিয়ে গেলে ওই ব্যক্তি কে বা কারা নাকি কোনো কারারক্ষী দিয়ে গেছেন?
রিপন একজন পোশাকশ্রমিক হয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীকে খুন করা অনেকের কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে। ঘটনার দিন বিকেলে অন্য কক্ষ থেকে আনার ছয় ঘণ্টার মধে৵ তুচ্ছ ঘটনায় অমিতকে খুন করার নেপথ্যে কোনো ইন্ধন আছে কি না, তদন্তে এখনো জানা যায়নি। এ ছাড়া ঘটনার দিন ও তার পরদিন চট্টগ্রাম কারাগারে থাকা সিসি ক্যামেরা প্রায় ২০ মিনিট বন্ধ থাকার পেছনে কোনো রহস্য আছে কি না, তাও স্পষ্ট হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আজিজ আহমেদ বলেন, তদন্তে হত্যার নেপথ্যে কোনো কারণ আছে কি না, এটি পরিকল্পিত কি না, সেলে ইট কীভাবে আসল, কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি—সব বিষয় বের করতে তদন্ত অব্যাহত আছে।
তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. কামাল হোসেন বলেন, এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।