রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি

‘অভিযোগে’র হয়রানিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

  • বর্তমান সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৯ বার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ হয়নি।

  • ২০০৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দু্ই সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা, ৪ কর্মচারীকে বদলি

নতুন জেলা প্রশাসক কিংবা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে যোগ দিলে তাঁর কাছে শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। তদন্তে সেসব অভিযোগের প্রমাণ মেলে না। তবে এর জেরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বদলি করা হয়। আবার অভিযোগে বিভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করা হলেও সেখানে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ঘটনা ঘটছে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলছেন, প্রশাসনের তদন্তে ধরা পড়েছে, শিল্পকলা একাডেমির সাবেক কর্মচারী শহীদুল ইসলাম ভুয়া অভিযোগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তবে তাঁর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। গত আগস্টে নতুন জেলা প্রশাসক যোগ দিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগকারীদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘২০১৭ সালে এখানে যোগ দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে অন্তত ২৯ বার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনবার তদন্ত হয়েছে। কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। এই ষড়যন্ত্রের তদন্ত করে শাস্তি দেওয়ার জন্য গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পৃথক তদন্তে কর্মচারী শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রথম তদন্তটি করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব মঞ্জুরুর রহমান (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা)। তদন্তে তিনি শহীদুল ইসলামকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন। পরের তদন্তটি করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব (যুগ্ম সচিব) জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি শহীদুল ইসলামের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও দাপ্তরিক কাজে অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে শহীদুলের স্থানীয় নিয়োগ বাতিল করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। গত বছর ২১ নভেম্বর এই মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুজন সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ও চার কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি আর এসবের মধ্যে নেই। মাসখানেক থেকে অন্য একটি জব (চাকরি) করছি। বেনামে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি ভুয়া কথা।’

রাজশাহীর বর্তমান জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল গত জুলাই মাসে যোগদান করেন। আর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জানান, বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষার) সঙ্গে বসে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করবেন।