‘অভাব দূর হলো ঠিকই, ছেলে আমার বেঁচে রইল না’

হাসিখুশি তোফায়েল ইসলামকে আর দেখতে পাবেন না স্বজনেরা
ছবি: সংগৃহীত

‘শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তোফায়েলের সঙ্গে ফোনে শেষ কথা হয়। সে জানায়, ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তারা সেখানে ব্যস্ত আছে। এর ১০ মিনিট পর থেকে তার সংযোগ বন্ধ পাই। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার সকাল নয়টার দিকে লাশ খুঁজে পাই ছেলের।’

কাঁদতে কাঁদতে ভাঙা ভাঙা গলায় কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত তোফায়েল ইসলামের বাবা হাছান আলী। তোফায়েল ওই ডিপোতে মালামাল লোড–আনলোডের কাজ করতেন।

রোববার বেলা একটার দিকে বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামের পূর্ব চালিয়াপাড়া এলাকায় তোফায়েল ইসলামের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। তাঁরা লাশের অপেক্ষায় আছেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবার পাবে ২ লাখ টাকা

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯, আগুন এখনও জ্বলছে

আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটারজুড়ে

আশপাশের গ্রামগুলোয় ছাই আর পোড়া গন্ধে বিপাকে শিশু, বৃদ্ধরা

যেভাবে চলছে আগুন নেভানোর চেষ্টা

তোফায়েলের বাবা স্থানীয় মাস্টার নজির আহমদ কলেজের কর্মচারী হাছান আলী বলেন, ‘ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে ছেলে আমার। পরিবারের অভাব দূর করে তিন বছর আগে ডিপোতে কাজ নেয় ও। অভাব দূর হলো ঠিকই, ছেলে আমার বেঁচে রইল না।’

হাছান আলীর চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তোফায়েল ইসলাম তৃতীয়। চমেক হাসপাতালে লাশের অপেক্ষায় থাকা তোফায়েলের ভগ্নপতি মো. শফিক ও ভাই বোরহান উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘সকালে লাশের গাড়ি এলেই আমরা দৌড়ে গিয়েছি। পরে সকাল নয়টার দিকে তোফায়েলের লাশ শনাক্ত করি। এখন লাশ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে গতকাল শনিবার রাত ১১টায়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের পর এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হয়েছেন বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে বাঁশখালী উপজেলার তিনজন রয়েছেন বলে রোববার দুপুর পর্যন্ত খবর পাওয়া গেছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান জানান, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে অনেকে চলে গেছেন। ৭০ জন চিকিৎসাধীন। আর চারজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ছয় কর্মী রয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।