লক্ষ্মীপুর থেকে নিখোঁজ চার কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে তাঁদের জেলা কারাগারের পেছনের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত ১১টার দিকে পুলিশ ওই কিশোরীদের অভিভাবদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
গতকাল রাতে জেলা পুলিশ সুপার এ এইচ এম কামরুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ বলে, ওই চার কিশোরীকে কেউ অপহরণ করেনি বা তারা কারও প্ররোচনায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়নি। মূলত ওই চার কিশোরীর পারিবারে অভাব–অনটন থাকায় তারা স্বজনদের না জানিয়ে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
উদ্ধার হওয়া কিশোরীরা হলো—উপজেলার চরকাদিরার বাদামতলী এলাকার মো. ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে জোবায়দা আক্তার, জয়নাল আবেদিনের মেয়ে মিতু আক্তার, সামছুল আলমের মেয়ে সামিয়া আক্তার ও আবুল খায়েরের মেয়ে সিমু আক্তার। তাদের চারজনেরই বয়স ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। তারা সম্পর্কে মামতো, ফুপাতো ও চাচাতো বোন। এর মধ্যে সামিয়া আক্তার স্থানীয় দক্ষিণ চরকাদিরা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। জোবায়দা আক্তার, মিতু আক্তার ও সিমু আক্তার একই এলাকার দক্ষিণ চরকাদিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, গত শনিবার সকালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু গ্রাম থেকে ওই চার কিশোরী নিখোঁজ হয়। চারজনের মধ্যে একজনের নানার বাড়ি নোয়াখালীর আন্ডারচরে। সেখানে যাওয়ার কথা বলে তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর তারা ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই কিশোরীদের পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তাদের ইচ্ছা ছিল, কাজ করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা। তবে তারা এ বিষয়টি পরিবারকে জানায়নি।
পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে ওই চার কিশোরী তোরাবগঞ্জ বাজারে আসে। সেখান থেকে তারা লক্ষ্মীপুরে যাওয়ার জন্য একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠে। অটোরিকশাটি তাদের লক্ষ্মীপুর শহরের দক্ষিণ তেমুহনীতে নামিয়ে দিতে চাইলে তারা চালককে ঢাকাগামী বাস কাউন্টারে নামিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে।
পরে ওই অটোরিকশার চালক ফারুক কিশোরীদের শহরের ঝুমুর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস নিতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ফারুক ওই কিশোরীদের সড়কের পাশে কাঁদতে দেখেন। পরে ফারুক কিশোরীদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কাজের সন্ধানে ঢাকা যাওয়ার বিষয়টি জানায়। তবে তারা বাড়িতে থেকে পালিয়ে আসার বিষয়টি ফারুকের কাছে গোপন করে।
ওই কিশোরীদের কথা শুনে ফারুকের সন্দেহ হওয়ায় তিনি চার কিশোরীকে তাঁর পূর্বপরিচিত পুলিশের নায়েক নুরুল ইসলামের বাসায় নিয়ে যান। চার কিশোরী নুরুল ইসলামের কাছে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার বিষয়টি গোপন করে। তবে নুরুল ইসলামের স্ত্রী শিরিনের গ্রামের বাড়ি কমলনগরের তোরাবগঞ্জ এলাকায়। ওই এলাকায় চার কিশোরীর নিখোঁজের বিষয়টি তিনি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন।
একপর্যায়ে গতকাল দুপুরের দিকে চার কিশোরীর একজন জানায়, তাদের বাড়ি কমলনগরের বাদামতলীতে। তারা অভাবের কারণে স্বজনদের না জানিয়ে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে নুরুল ইসলামের মাধ্যমে খবর পেয়ে কমলনগর থানা–পুলিশ চারজনকে উদ্ধার করে।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান বলেন, উদ্ধারের পরও ওই চার কিশোরী পরিবারের কাছে যেতে চাচ্ছিল না। তবে তাদের বুঝিয়ে রাত ১১টার দিকে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।