হাসিনা বেগমের (৩৫) বসবাস ভাইয়ের বাড়িতে। স্বামী প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন। হাসিনা এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, বড় ছেলে চায়ের দোকানে কাজ করে, ছোট ছেলের বয়স পাঁচ বছর। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার হাসিনার ঘর আলো করে আসে নতুন অতিথি। কিন্তু অভাবের সংসারে সেই আলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নবজাতক ছেলেসন্তানকে তুলে দিয়েছেন অন্যের কোলে।
লালমনিরহাটের আদিতমারীর সারপুকুর ইউনিয়নের নয়াবাড়ি গ্রামে মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন সকাল আটটার দিকে নয়াবাড়ি গ্রামে হাসিনা বেগম তাঁর ছোট ভাই কেরামত আলীর বাড়িতে এই সন্তানের জন্ম দেন। হাসিনার স্বামী জোকতার আলীর বাড়ি তালুক হরিদাস গ্রামে। তিনি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সংসারের কোনো খরচ দেন না বলে জানান হাসিনা বেগম।
হাসিনা বেগম বলেন, ‘...আরেকটা ছেলে জন্ম নিল, স্বামী বলল ছেলেটাকে পোষানি (দত্তক) দেই, ও ভালো থাকবে। অভাবের তাড়নায় ছাওয়াটাক মান্ষিক দিলাম, মায়া হবে তাই এক ফোঁটা দুধও দেই নাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি সরকার আমার আর ছাওয়াটার থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে ছাওয়াক ফিরি আনিম।’ জোকতার আলী বলেন, ‘আমার দুই সংসার, অনেক খরচ, উপায় নাই, তাই ছেলেটাক পোষানি দিছি।’
হাসিনার ভাই কেরামত আলী বলেন, প্রায় ১০ বছর হলো তাঁর বিয়ে হয়েছে, কোনো সন্তান নেই। তিনি বোনের সন্তানকে নিতে পারতেন, কিন্তু করোনা সংকটকালে আয়রোজগার কমে গেছে, তাই সাহস করে কথাটা বলেননি। তিনি বলেন, ‘ওরা স্বামী-স্ত্রী মিলে গ্রামের অধির চন্দ্র রায়ের শ্বশুরবাড়ির এলাকায় এক নিঃসন্তান দম্পতিকে ছেলেকে দিয়েছে।’
অধির চন্দ্র রায় বলেন, হাসিনা বেগম তাঁর সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করতে পারবেন না। তাই কুড়িগ্রামের রাজারহাটের একটি পরিবারের কাছে দত্তক দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে তারা শিশুটিকে নিয়ে গেছে।
রাজারহাটের ওই বাসিন্দা বলেন, ‘আমার নিঃসন্তান মেয়ের জন্য জোকতার আলী ও হাসিনা বেগমের সম্মতিতে আমি তাঁদের নবজাতককে পোষানি নিয়েছি। আমার জামাতার গাজীপুরে গার্মেন্টস কোম্পানির শেয়ার আছে, আমাদের মেয়ের কাছে ছেলেটা ভালোই থাকবে।’
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনসুর উদ্দিন বলেন, নবজাতক সন্তানকে অন্যকে দিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি খতিয়ে দেখে পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জেলা প্রশাসকের পরামর্শক্রমে হাসিনা বেগম ও তাঁর সন্তানের জন্য সরকারিভাবে যতটুকু করা সম্ভব, তা করা হবে।