বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যাওয়া এক বিদ্যুৎকর্মীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় গ্রাহকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের একজন উপমহাব্যবস্থাপক ও চারজন লাইনম্যান। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার আটমূল ইউনিয়নের ভাইয়েরপুকুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ হামলার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত আবদুল হান্নান (৩৯) বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর পীরব উপ-আঞ্চলিক বিদ্যুৎ কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামে। হামলায় আহত রকিবুজ্জামান কাজ করেন ওই কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পদে। আহত অন্যরা হলেন লাইনম্যান পিন্টু প্রামাণিক, বিকাশ চন্দ্র, ফারুক হোসাইন ও আজিজুল হক। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। হামলার ঘটনায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করে আজ শনিবার দুপুরে শিবগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন এজিএম রকিবুজ্জামান।
আবদুল হান্নানকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলার পরমান্দপুর গ্রামের আবু সাঈদ (৫০), তাঁর ছেলে সোহেল রানা ওরফে সবুজ (২৫), চন্দনপুর গ্রামের বাবর আলী (৩০), আতাউর রহমান (৩০) এবং বড়বেলঘড়িয়া গ্রামের কাজী ইমরান আলীকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু সাঈদ নামের ওই ব্যক্তি পরমান্দপুর গ্রামের একটি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে বাড়িতে ব্যবহার ছাড়াও ভাইয়ের পুকুর বাজারে কেবল সংযোগের ব্যবসা করে আসছিলেন। খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর পীরব উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম রকিবুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল আবু সাঈদের বাড়িতে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করতে যান।
শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ ওই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে আবু সাঈদের স্ত্রী সফুরা বেগমসহ কয়েকজন নারী ‘চোর’ ‘চোর’ বলে চিৎকার দেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এসে বিদ্যুৎকর্মী দলটির সদস্যদের মারধর শুরু করেন। পরে হামলাকারীরা তাঁদের আটকে রাখেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে শিবগঞ্জ থানার টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরুদ্ধ বিদ্যুৎকর্মীদের উদ্ধার করে।
এই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ছয় কর্মকর্তা-কর্মীকে উদ্ধার করলেও আবদুল হান্নানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে রাত পৌনে তিনটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি ধানখেত থেকে তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় লাশের মুখে রক্ত এবং শরীরে কিলঘুষির চিহ্ন দেখা গেছে।