বরগুনার পাথরঘাটায় মাসুম সিকদার নামের এক ব্যক্তি বিবাহিত এক নারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। সেই ভুয়া পরিচয়পত্রে ওই নারীর স্বামীর নামের জায়গায় নিজের নাম ব্যবহার করেন মাসুম। এরপর এই ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ওই নারীর নামে ভিজিডি কার্ড তৈরি করে নিজে সুবিধা নিচ্ছেন। যদিও ওই নারী কখনো ভিজিডি সুবিধার জন্য আবেদনই করেননি।
এ ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মাসুম সিকদার (১৯) বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সোবহান সিকদারের ছেলে।
ওই নারীর নাম জেসমিন। তাঁর স্বামীর নাম শফিকুল ইসলাম। শফিকুল বলেন, তাঁর স্ত্রীর নাম যে ভিজিডির তালিকায় আছে, তা তাঁরা জানতেনই না। কারণ, ভিজিডি সুবিধার জন্য কখনো আবেদনই করা হয়নি।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে এই দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি পরিচালিত হয়। তাই এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাথরঘাটা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার আবু জাফর বলেন, ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ওই কার্ডের বিপরীতে গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বরাদ্দকৃত ৬০ কেজি চাল বিতরণ স্থগিত রেখে কাঁঠালতলি পরিষদে জমা রাখা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।
কাঁঠালতলি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘জেসমিনের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ঠিক রেখে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন মাসুম সিকদার। তিনি সেখানে জেসমিনের স্বামী হিসেবে নিজের নাম ব্যবহার করেন এবং জেসমিনকে ভিজিডি তালিকায় যুক্ত করেন। পরে ভিজিডির কার্ড ব্যবহার করে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল নিয়েছেন মাসুম। এ ঘটনায় গত জুলাই মাসের শেষ দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। এরপর গত জুলাই ও আগস্ট মাসের ৬০ কেজি চাল বিতরণ স্থগিত রেখে কাঁঠালতলি পরিষদে জমা রাখা হয়েছে।’
রুহুল আমিন আরও বলেন, মাসুম সিকদার যে অবিবাহিত, তা স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজালাল জানেন। তবু ভিজিডি তালিকায় তাঁর নাম দিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও ইউপি সচিব রাসেল খানও জড়িত।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ওই ভিজিডি তালিকায় বিদেশে থাকা রিতা বেগম নামের এক নারীর নাম রয়েছে। রিতা বেগমের স্বামী শহিদুল ইসলাম ইউপি সদস্য শাহজালালের সমর্থক ও ঘনিষ্ঠ লোক। প্রবাসী রিতা বেগমের নাম ভিজিডি তালিকায় আছে কিন্তু গ্রামের অনেক অসহায় গরিবের নাম ওই ভিজিডি তালিকা নেই।
কাঁঠালতলি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজালাল বলেন, ‘মাসুম সিকদারের ভিজিডি নাম আমি জমা দিইনি। চেয়ারম্যানের বরাদ্দ থেকে চেয়ারম্যান এ তালিকা করেছেন।’ রিতা বেগমের বিষয়টি সম্পর্কে ইউপি সদস্য বলেন, তাঁরা গরিব, তাই তাঁদের নাম রাখা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভিজিডির এ তালিকা অনলাইনে করা হয়েছে, আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আমার ওইভাবে সব খোঁজখবর রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু ইউপি সদস্য জেনেশুনে কেন এ নাম রেখেছেন, তা আমার জানা নেই। এ বিষয়টি সত্য যে মাসুম অবিবাহিত।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে মাসুম সিকদারের মুঠোফোনে ফোন করা হলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় এটি মাসুমের ফোন নম্বর নয়, রং নম্বর। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে মাসুম ও তাঁর বাবা পলাতক। তাঁর বাড়িতে গেলে তাঁর সৎমা ও বড় ভাবি এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রতি মাসে মাসুম চাল নিয়ে আসতেন। এগুলো কিসের চাল, তা তাঁরা জানতেন না।
জানতে চাইলে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আইউব আলী হাওলাদার বলেন, ভুয়া বা নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, বিকৃত বা নিজস্বভাবে পরিবর্তন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগটি এখন কী অবস্থায় আছে না দেখে বলা সম্ভব নয়। তবে এ অভিযোগের অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’