অবশেষে জমির দখল পেয়েছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের পরিবার। ভূমিহীন শাহ আবদুল করিমকে ওই জমি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু এলাকার একটি পক্ষের বাধার কারণে তিনি জীবিত অবস্থায় দখল পাননি। পরে তাঁর ছেলে জমির দখল পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাতেও কাজ হচ্ছিল না। সর্বশেষ তিনি জমির দখল পেতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন দেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল শাহ আবদুল করিমের বাড়ি দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে। জমির বিষয়টি নিয়ে গত রোববার প্রথম আলোয় ‘শাহ আবদুল করিমকে দেওয়া জমি ৫৭ বছরেও পায়নি পরিবার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সোমবার বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোতে সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। এরপর দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান মামুন আজ মঙ্গলবার উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উজানধল গ্রামে যান। এরপর বাউলসম্রাটের একমাত্র ছেলে শাহ নূর জালালসহ অন্যদের নিয়ে দিনভর জমি মাপজোখ করেন। বিকেলে তাঁকে বুঝিয়ে দিয়ে সেই জমিতে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়।
শাহ নূর জালাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫৭ বছর পর বাবাকে দেওয়া জমির দখল পেলাম। এ জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ। এই জমির বিষয়টি নিয়ে বাবার অনেক দুঃখ ছিল। এই দুঃখের কথা তিনি একটি গানে লিখেছেন।’
জেলা প্রশাসনে দেওয়া লিখিত আবেদন সূত্রে জানা যায়, অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা শাহ আবদুল করিম ভূমিহীন ছিলেন। উজানধল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করিমের প্রিয় নদী কালনি। এই নদীর কথা তিনি অসংখ্য গানে উল্লেখ করেছেন। নদীর উত্তর পারে উজানধল এবং দক্ষিণ পারে জালালপুর ও তাড়ল গ্রাম। বাউল করিমের নিজের কোনো জমিজিরাত ছিল না। ১৯৬৪ সালে স্থানীয় প্রশাসন জালালপুর গ্রামের পাশে তাঁকে ২ একর ১১ শতক জমি স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়। এই জমি তাঁর নামে রেকর্ড হয়েছে। শুরু থেকেই জমির খাজনাও পরিশোধ করছেন। কিন্তু যখনই জমির দখলে যেতে চেয়েছেন, তখনই বাধা দিয়েছে তাড়ল গ্রামের একটি পক্ষ। জমির দখল না পাওয়ার দুঃখ সঙ্গে নিয়েই ২০০৯ সালে মারা যান শাহ আবদুল করিম। এরপর নানাভাবে জমির দখল পাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁর ছেলে বাউল শাহ নূর জালাল। অবশেষে মঙ্গলবার সেই জমির দখল পেলেন তিনি।
এ সময় ইউএনওর সঙ্গে দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহেল মিয়া, দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা দয়াময় দাস, দিরাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, ‘এলাকার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বিষয়টির মীমাংসা করেছি। শাহ আবদুল করিমকে সরকার থেকে দেওয়া জমি মাপজোখ করে পিলার ও সাইনবোর্ড বসিয়ে তাঁর পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আর কোনো সমস্যা হবে না।’