অনিশ্চিত রাজশাহীর দারুচিনি প্লাজার ভবিষ্যৎ

দুই বছরে আটতলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে চারতলা পর্যন্ত উঠেছে। প্রথম আলো
দুই বছরে আটতলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে চারতলা পর্যন্ত উঠেছে।  প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক ভবনের একটি হচ্ছে দারুচিনি প্লাজা। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদরত্বের ভিত্তিতে এই ভবনের নির্মাণকাজ পায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তার পক্ষে কাজটি করছিলেন একজন ব্যবসায়ী। সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংক ওই ব্যবসায়ীর বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলেছে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দারুচিনি প্লাজার ভবিষ্যৎ।

২০০৯ সালে রাজশাহী নগরের নিউমার্কেটের কাঁচাবাজার উঠিয়ে সেখানে দুই বিঘা জমির ওপর দারুচিনি প্লাজার নির্মাণকাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে সেখানে একটি আটতলা ভবন গড়ে তোলার কথা ছিল। আর নির্মাণ শেষ হলে ভবনের ২৮ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন। বাকিটা পাবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। কাজটি পেয়েছিল রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা শামসুজ্জামান আওয়ালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামসুজ্জামান জেভি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কাজটি করছিলেন রুহুল আমিন নামের একজন ব্যবসায়ী। যে ভবন ২ বছরে আটতলা হওয়ার কথা ছিল, গত ১০ বছরে সেই ভবনের চারতলা পর্যন্ত উঠেছে। বর্তমানে নির্মাণকাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ওই ভবনে দোকান বুকিং দিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নিউমার্কেটের একজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রায় ছয় বছর আগে ওই ভবনে দোকানের জন্য তিনি চার লাখ টাকা বুকিং দিয়েছেন। হস্তান্তরের সময় আরও দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা। এখনো তিনি সেই দোকান এত দিনেও বুঝে পাননি। অপর একজন ব্যবসায়ী সেই সময় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, দারুচিনি প্লাজায় দোকানের জন্য ছয় বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। আর ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। হস্তান্তরের সময় তিনি এই টাকা দেবেন। কিন্তু এখনো তার দোকান ‘রেডি’ হয়নি। গত বছরের (২০১৮) জানুয়ারিতে তাঁর দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি তাঁর দোকান বুঝে পাননি।   

ব্র্যাক ব্যাংকের রাজশাহী শাখার একটি নিলাম বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকের ওই শাখার কাছে ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের এক কোটি সাত লাখ টাকার শ্রেণিকৃত ঋণ রয়েছে। এই টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক গত ৩ মে ঢাকার একটি দৈনিকে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এরপরও দারুচিনি ভবনের কাজ আর করবেন কি না, জানার জন্য ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের দুটি মুঠোফোনে গতকাল বুধবার একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে ভবনের মূল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শামসুজ্জামান জেভির মালিক শামসুজ্জামান আওয়াল বলেন, তাঁরা আর কাজ করবেন না। এটি সিটি করপোরেশনকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী রুহুল আমিন আর টাকা দিতে পারবেন না, এ জন্যই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আটতলা ভবন নির্মাণের চুক্তি ছিল, সেখানে আরও চারতলা বাকি রয়েছে। এ অবস্থায় চুক্তিভঙ্গ হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, চুক্তিতে এটাও রয়েছে যে পর্যন্ত কাজ হবে চাইলে চুক্তি অনুযায়ী সেই পরিমাণ ভবন ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে। যেসব ব্যবসায়ী এই ভবনে দোকান নেওয়ার জন্য বুকিং দিয়েছেন তাঁদের কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বিষয়টি ফয়সালা করে ফেলবেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, তাঁদের চুক্তি রয়েছে শামসুজ্জামান জেভির সঙ্গে। রুহুল আমিনের সঙ্গে শামসুজ্জামান জেভির অভ্যন্তরীণ চুক্তি থাকতে পারে। এটা তাদের বিষয় নয়। তাঁরা শামসুজ্জামান জেভির কাছ থেকে কাজ বুঝে নেবেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তারা চারতলা পর্যন্ত শেষ করেছে। এখন তাঁরা নতুন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাকি কাজ করার জন্য চুক্তিও করতে পারেন। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে সে পর্যন্ত নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় কি না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।