রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের অরাজকতা বন্ধের পাশাপাশি অনাবাসিক ছাত্রদের হলে রাখতে চান না প্রাধ্যক্ষরা। আগামীকাল সোমবার এ নিয়ে আরেক দফায় সভা করে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাতে চান তাঁরা।
আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভা হয়। সেখানে প্রাধ্যক্ষরা হলের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে অরাজকতা বন্ধ ও অনাবাসিক ছাত্রদের বের করে দেওয়ার বিষয়টিও ছিল।
সভায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে হলের আসন দখল, বাণিজ্য ও অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়গুলো তুলে ধরেন প্রাধ্যক্ষরা। তাঁরা বলেন, আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রসংগঠনের অরাজকতা চান না। এ ঘটনা ঘটালে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিও চান। সভায় উপস্থিত থাকা ছয়জন প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভায় উপস্থিত থাকা প্রাধ্যক্ষরা বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতির পর খালি হওয়া আসনগুলোতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীই বেশি। তাঁরা সবাই ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে উঠেছেন। এ জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে বলেও তাঁরা শুনেছেন। প্রাধ্যক্ষরা তাঁদের হলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের আর রাখতে চান না। তাঁরা আবাসিক শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যা দূর করতে চান।
সভায় প্রত্যেক প্রাধ্যক্ষ তাঁর নিজ হলে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলার বর্ণনা দেন। তাঁরা কীভাবে দিনের পর দিন অপমানিত হচ্ছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই বলতে পারছেন না, কেন বলতে পারছেন না—সেসব নিয়েও আলাপ করেন।
প্রাধ্যক্ষরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর হল প্রশাসন আলাদা কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে থাকলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনে সমস্যা হয়। হল প্রশাসন অসম্মানজনক অবস্থায় থাকতে চায় না। বিশৃঙ্খলার মতো ঘটনা ঘটলে অবশ্যই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সভায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শহীদ ড. শামসুজ্জোহা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ঘটনাই বেশি আলোচিত হয়েছে। একজন প্রাধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাধ্যক্ষরা আর ছাত্রলীগের দ্বারা লাঞ্ছিত হতে চান না। এই পদের যে সম্মান, সেই সম্মান নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চান। একটি হলের ঘটনাতেও যদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তাহলে পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটত না। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।
আরেক প্রাধ্যক্ষ বলেন, তাঁরা যা বলার দরকার, তা সভায় বলেছেন। এখন এগুলো গুছিয়ে হল প্রাধ্যক্ষদের আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করবেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও অবগত আছে। তাঁরা আগামীকাল এসব বিষয় নিয়ে আবার সভা করবেন। পরে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ফেরদৌসি মহল প্রথম আলোকে বলেন, হলের ডাইনিং, ওয়াইফাইসহ নানা সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া, সম্প্রতি ঘটা নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সমস্যার কীভাবে সমাধান হয়, সে সিদ্ধান্ত তারা নেবেন।
হলের সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এখনই বসার কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে ফেরদৌসি মহল বলেন, তারা আগে নিজেরা দেখবেন। নিজেরাই চেষ্টা করবেন। বাইরে থেকে যেসব হলগুলোতে সমস্যাগুলোর কথা শুনতে পাচ্ছেন, সেসব হলে প্রাধ্যক্ষরা মিলে সরেজমিনে যাবেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার পর ছাত্রলীগ শুরুতে আসন দখল করতে তালা মারতে শুরু করে। এরপর বৈধভাবে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের নানা কায়দায় হলছাড়া করে। গত বছরের ২৩ অক্টোবর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫৬ ও ৪৭৬ নম্বর কক্ষ থেকে দুজনকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। ৮ ডিসেম্বর রাতে এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মাদার বখ্শ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, শহীদ হবিবুর রহমান, শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হল থেকে শিক্ষার্থী বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ ১৬ জুন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবার বিকেলে মাদার বখ্শ হলের একটি কক্ষ দখলে নিতে তালা মারা হয়।