অনলাইন পণ্যে ঠকার অভিযোগ বেশি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গুগলে ‘ফ্রি বেস্ট বিডি ডট কম’ নামের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে কয়েক হাজার টাকার হস্তশিল্পের পণ্য অর্ডার করেছিলেন মো. রবিউল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ঠিকানা দেওয়া ছিল চট্টগ্রামের সুবসতি সেন্টার। অগ্রিম টাকাও দিয়েছিলেন তিনি। কথা ছিল তিন কর্মদিবসের মধ্যেই পণ্যগুলো হাতে পাবেন। কিন্তু এ ওয়েবসাইটটি যে ভুয়া, সেটি তিনি বুঝতে পারেননি। ফলে তাঁর পুরো টাকাই জলে যায়। ঘটনাটি গত বছরের শেষের দিকে।

অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে ঠকার পর রবিউল ইসলাম চট্টগ্রামের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দেন। পরে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখেন, ওই নামে আদতে কিছুই নেই।

রবিউলের মতো অনলাইনে পণ্য কিনতে সম্প্রতি ঠকেছেন মাখলুন মোরশেদ।

ফেসবুকে ঘুরতে ঘুরতে ‘সিমোনে হাজার’ নামে একটি পেজে গয়নার বিজ্ঞাপন দেখতে পান তিনি। সুন্দর নকশার এ গয়না দেখে পছন্দ হয়ে যায় তাঁর। যথারীতি পেজ থেকে বিকাশ নম্বর নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে গয়নার প্যাকেটও আসে। কিন্তু প্যাকেট খুলে তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। যে গয়না তিনি অর্ডার করেছিলেন, সেটি তিনি পাননি। পেয়েছেন পুরো নকল আরেকটি গয়না।

মাখলুন মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, নকল গয়না পাওয়ার পর তিনি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু পেজের ঠিকানা না থাকায় কোনো লাভ হয়নি।

শুধু মামুনুর কিংবা মাখলুনই নন, গত এক বছরে তাঁদের মতো এমন আরও অর্ধশতাধিক ভোক্তা অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৮৭১টি। এর মধ্যে ৪৫০টি অনলাইনে পণ্য কিনে ঠকার অভিযোগ। নকল পণ্য গছিয়ে দেওয়া ও নির্ধারিত সময়ে পণ্য না পাওয়ার মতো অভিযোগই মূলত বেশি। বাকিগুলো কুরিয়ারে দেরিতে পণ্য পাঠানো, বেস্টুরেন্টে পানির দাম বেশি রাখা, ওজনে কারসাজি প্রভৃতি। বেশির ভাগ অভিযোগই নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান খুঁজে না পাওয়ায় অর্ধশতাধিক অভিযোগের সুরাহা করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স শপগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তাদের চিঠি দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধছে ভুয়া সাইট কিংবা ভুয়া ফেসবুক পেজ নিয়ে। কারণ, এসব পেজে ভুয়া ঠিকানা দেওয়া হয়। ফলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই ঠিকানায় গিয়ে কাউকে খুঁজে পান না। অভিযোগকারীও প্রতিকার পান না।

ভোক্তা অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজ, ই–মেইল, এসএমএস ও স্বশরীরে চট্টগ্রামের বন্দরটিলায় টিসিবি ভবনের কার্যালয়ে গিয়ে এসব অভিযোগ দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তবে অভিযোগের বেশির ভাগই ভোক্তা ও বিক্রেতার মধ্যে মীমাংসা হয়ে যাচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে না।

চট্টগ্রামের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আগে রেস্তোরাঁয় বাড়তি দাম রাখার অভিযোগই বেশি এলেও এখন আসছে অনলাইনে পণ্য বিক্রি নিয়ে। ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারের কারণে এসব অভিযোগ বাড়ছে গত এক বছরে ই–ভ্যালির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। অভিযোগের সংখ্যা ১৮টির বেশি। অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁরা চিঠি দিয়েছেন। পরে অভিযোগকারীর পরামর্শে মীমাংসা করেছেন।

২০১৪ সালে ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে প্রথম অভিযোগ আসে। এটি ছিল নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি। এরপর ক্রমেই অভিযোগ বেড়েছে।

এ পর্যন্ত অভিযোগ পাওয়া গেছে মোট ১ হাজার ৮৩২টি। মোট জরিমানা করা হয়েছে ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে অভিযোগকারীদের দেওয়া হয় ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অবশ্য এ পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়েছে ২ হাজার ৪১৭টি। এতে ৪ হাজার ৬৬৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, মিথ্যা বিজ্ঞাপনে প্রতারণা, প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করা, ভেজাল পণ্য বিক্রি, পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি প্রভৃতি কারণে যেকোনো ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। তবে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারণা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ই-কর্মাস ফ্যামিলির সভাপতি সঞ্জয় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্য কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে পেজে ঠিকানা দেখে নেওয়া। ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য কিনলে ঠকার আশঙ্কা নেই। ফেসবুক পেজ থেকে পণ্য কিনতে হলে পুরোনো ক্রেতাদের মন্তব্য বা রিভিউ পড়তে হবে।