আগে জন্মনিবন্ধন নিতে মা–বাবার জন্মনিবন্ধন লাগত না। এখন নতুন করে জন্মনিবন্ধন নিতে মা–বাবার জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পৌর এলাকাবাসী। নতুন করে জন্মনিবন্ধন নিতে বা জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে দিতে হচ্ছে মা–বাবার জন্মনিবন্ধন সনদও। আর জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য দফায় দফায় তিন থেকে চার স্থানে ধরনা দিতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, আগে জন্মনিবন্ধন নিতে মা–বাবার জন্মনিবন্ধনের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এখন নতুন করে জন্মনিবন্ধন নেওয়া বা জন্মনিবন্ধন সংশোধনে মা–বাবার জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার হচ্ছে। মা–বাবার জন্মনিবন্ধন না থাকলে সেটিই আগে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তারপর নিজে বা কোনো দোকান থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্র পূরণের পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনকারীকে যেতে হয় পৌরসভায়। পৌরসভা থেকে ওই আবেদনে একটি ওটিপি নম্বর দেওয়া হয়। সেটি নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে যেতে হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে আবেদনপত্রে ‘ঠিক আছে’ লিখে দেওয়া হয়। এরপর আবেদনকারীকে আবার পৌরসভায় যেতে হয়। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র রেখে আবেদনকারীকে সময় বেঁধে দেন। তবে কোনো কারণে সংশোধিত কপিতে ভুল থাকলে বিড়ম্বনার অন্ত নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ইউএনও কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য অনলাইন আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রহণ করে পৌরসভার অনলাইন সার্ভার। পরে সেটি অনুমোদনের জন্য ইউএনওর কাছে চলে যায়। সংশোধনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিরা কার্যালয়ে এলে তা ঠিক আছে কি না, যাচাই-বাছাইয়ের পর আবেদনপত্র দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সম্প্রতি সার্ভারটি ধীরগতিতে চলছে। এ জন্য কাজগুলো আটকে আছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শূন্য থেকে ৪৫ দিন বয়সের শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য ইপিআই (টিকার) কার্ড, মা–বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, বাড়ির পৌর কর পরিশোধের রসিদ ও পাসপোর্ট আকারের ছবি প্রয়োজন হয়। ৪৬ দিন থেকে ৫ বছরের শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য ইপিআই কার্ড বা স্বাক্ষর ও মোহরযুক্ত প্যাডে স্বাস্থ্যকর্মীর প্রত্যয়নপত্র, মা–বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, বাড়ির পৌর কর পরিশোধের রসিদ, চৌকিদার করের হালনাগাদ রসিদ, প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নসহ বিদ্যালয়ের প্রত্যয়নের নথিপত্র দিতে হবে। আর পাঁচ বছরের বেশি বয়সের শিশু বা ব্যক্তির জন্য পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি পাসের সনদ, যোগ্যতার সনদ না থাকলে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র এবং জন্মনিবন্ধন পত্রের ৭–এর ১ নম্বর কলামে চিকিৎসকের স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। ২০০১ সালের পর যাদের জন্ম, তাদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে মা–বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, মা–বাবা মৃত হলে অনলাইন মৃত্যুসনদ এবং ২০০১ সালের আগে জন্মগ্রহণ করে থাকলে সে ক্ষেত্রে মা–বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র, মা–বাবা মৃত হলে মৃত্যুসনদ, বাড়ির পৌর কর পরিশোধের হালনাগাদ রসিদ, আবেদনপত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা ইউপি সদস্য কর্তৃক স্বাক্ষর করে জমা দিতে হবে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভায় সরেজমিনে জন্মনিবন্ধনের জন্য আসা মানুষের জটলা চোখে পড়ে। অনেকে ক্লান্ত হয়ে বাইরে বসে আছেন। প্রতিদিনই পৌরসভা ও ইউএনওর কার্যালয়ে ভিড় করছেন মানুষ। সব প্রক্রিয়া শেষে জন্মনিবন্ধন পেতে সময় লাগে বলে জানালেন তাঁরা। আর সংশোধনের পর কোনো কারণে ভুল থাকলে ভোগান্তির শেষ নেই।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী আক্তার, সাবেকুন্নাহার রীমা ও স্বর্ণা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ইউনিক পরিচয়পত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর মা–বাবার জন্মনিবন্ধন নেই। এতে বিড়ম্বনা, হয়রানি ও ভোগান্তি বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মেরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এত জটিল না করলেও হতো।
পৌরসভার ৭ জন কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ জন প্রথম আলোকে বলেন, প্রক্রিয়াটি এত জটিল না করে আরও সহজ করা দরকার। পৌরসভা থেকে ইউএনও কার্যালয়, ইউএনও কার্যালয় থেকে পৌরসভার বিড়ম্বনাটা অন্তত বন্ধ করা উচিত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এ কে এম রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, আগে জন্মনিবন্ধন সংশোধন শুধু পৌরসভায় করা হতো। এখন জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য ইউএনওর কার্যালয়ে যেতে হয়। এ নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নাগরিকেরা। তা ছাড়া ইউএনও কার্যালয়ের সার্ভারে প্রায়ই জ্যাম হয়ে থাকে।