নারী যখন ডিজিটাল বৈষম্যের শিকার

ডিজিটাল বৈষম্য প্রযুক্তিতে নারী-পুরুষের সমান অন্তর্ভুক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সেতু মণ্ডল (৪০)। একটি প্রতিবেদনের প্রয়োজনে তাঁর মুঠোফোন নম্বর চাইলে কিশোর ছেলেকে ডেকে আনলেন এই প্রতিবেদকের সামনে। বললেন, মুঠোফোন নম্বর তাঁর নিজের মুখস্থ নেই। ছেলে জানে। তিনি শুধু কল এলে ধরেন। তাঁর স্মার্টফোনটি ছেলের কাছেই থাকে।

সরকারের মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচিতে এবার তালিকাভুক্ত হয়েছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের গুইতা কৃষ্ণনগর গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা কবিতা রানী মণ্ডল। তালিকাভুক্ত হতে অনলাইন আবেদনে যে মুঠোফোন নম্বরটি ব্যবহার করেছেন, সেটি তাঁর স্বামী দীপ্ত মণ্ডলের। কবিতার স্বামী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর স্ত্রী অনলাইনে আবেদন করতে পারেন না। তাই স্ত্রীর হয়ে তিনি নিজের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে আবেদন করেছিলেন।

প্রযুক্তিতে নারী-পুরুষের সমতার জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে হবে।
রাশেদা কে চৌধূরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

সেতু মণ্ডল ও কবিতা রানী মুঠোফোনের মালিক হলেও এই যন্ত্রের প্রযুক্তিগত অন্যান্য সুবিধা নেওয়ার বাইরে রয়েছেন। আবার নারীদের বড় একটি অংশের এখনো মুঠোফোন নেই। এ ছাড়া কম্পিউটার ও ল্যাপটপের মতো যন্ত্র থেকে তাঁরা অনেক দূরে।

সেতু ও কবিতার মতো নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি জরিপ প্রতিবেদনেও। ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যবহারের সুযোগের ওপর বিবিএস গত বছরের নভেম্বরে একটি প্রাথমিক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষের নিজের মুঠোফোন রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে ৭২ শতাংশের বেশি এবং ৫১ শতাংশের বেশি নারীর নিজস্ব মুঠোফোন রয়েছে। নিজস্ব স্মার্টফোন আছে এমন পুরুষের হার প্রায় ৩৪ শতাংশ, নারী প্রায় ২১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপকালের শেষ তিন মাসের তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ কম নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। ইন্টারনেট ব্যবহার না করার পেছনে ৬৮ শতাংশ নারীই জানান, তাঁদের ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় জানেন না। অন্যরা এলাকায় ইন্টারনেট না থাকা, এর খরচ বেশি, নিরাপত্তা, সামাজিক–সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।

মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুঠোফোন অর্থনীতি–২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় ২৩ শতাংশ কম নারীর নিজস্ব মুঠোফোন রয়েছে।

আবার প্রজন্মকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনমুখী করতে স্কুল থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেটিও যন্ত্র (ডিভাইস) ও ল্যাব ব্যবহারের সুযোগ এবং উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে কার্যকর হতে পারছে না। রাজধানীর চারটি বেসরকারি স্কুলের ৯২ শিক্ষার্থীর সঙ্গে দলগতভাবে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়ে স্কুল থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা পর্যায়ে কাজ করছে সরকার। আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এ কাজের ফল পাওয়া যাবে।
জুনাইদ আহ্‌মেদ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী

এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল ৮ মার্চ বুধবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য: ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ওই চারটিসহ সারা দেশে ৯ হাজার ১টি নিম্ন ও মাধ্যমিক স্কুলে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করেছে। আইসিটি বিষয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা এ ল্যাবের প্রধান উদ্দেশ্য।

ছাত্রীর তুলনায় ল্যাপটপের সংখ্যা খুবই কম। একেকটি সেকশনের ব্যবহারিক ক্লাস দুই মাসে একবার নেওয়া সম্ভব হয়।
আহমাদ উল্লাহ কাসেমী, স্কুলের ল্যাবের একমাত্র প্রশিক্ষক

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়ে স্কুল থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা পর্যায়ে কাজ করছে সরকার। নারী–পুরুষের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্যের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে সরকার কাজ করছে। আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এ কাজের ফল পাওয়া যাবে।

ডিজিটাল বৈষম্য কীভাবে কাটানো যায়, জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তিতে নারী-পুরুষের সমতার জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে হবে। অসমতা দূর করতে স্কুল পর্যায় থেকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাশেদা কে চৌধূরী

ইন্টারনেট ও মুঠোফোন ব্যবহারে বৈষম্য

তরুণদের ওপর সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে (ডাইনামিকস অব ইয়ুথ অ্যান্ড জেন্ডার ইনক্লুসিভিটি ইন টেকনোলজি ইন বাংলাদেশ) বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মুঠোফোন থাকার হার অর্ধেক। শহরের তুলনায় গ্রামের মেয়েদের ১৫ শতাংশ কম মুঠোফোন রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারগুলোর মধ্যে সাধারণ একটি ধারণা আছে যে ইন্টারনেটযুক্ত মুঠোফোন থাকলে মেয়েরা সহজে ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে। আবার প্রতারণার ফাঁদে পড়তে পারে।

সানেমের গবেষণাটির অন্যতম গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক শাকিল আহমেদ বলেন, একই পরিবারের ছেলেটি যতটা সুযোগ পেয়েছে, মেয়েটি তা পাচ্ছে না। এ বৈষম্য প্রযুক্তিতে নারী–পুরুষের সমান অন্তর্ভুক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া যায় না। বাংলাদেশকে উদ্ভাবনের জায়গায় দেখতে চাইলে প্রযুক্তিতে মেয়েদের সুযোগ দিতে হবে। একটু সুযোগ দিলে নারী অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
লাফিফা জামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক

স্কুলেও তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে থাকার সুযোগ কম

চারটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, আইসিটি বিষয়ে পাঠ্যবই ও ল্যাব থাকলেও স্কুলে শেখার সুযোগ কম। মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি বেশি তীব্র। কারণ, অনেক মেয়ের পরিবারে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ কম।

রাজধানীর মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের দুটি শাখায় নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ ছাত্রী পড়ে। নবম ও দশম শ্রেণির মোট ৯২২ ছাত্রীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে ৫৫৬ জন। স্কুলটির ল্যাবে ১৭টি ল্যাপটপ রয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আইসিটি বিষয়ে ল্যাবে ছাত্রীদের হাতে–কলমে শেখার কথা। তবে সেখানে খুব কমই যাওয়ার সুযোগ হয় ছাত্রীদের। নবম–দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের ছাত্রীরা কিছুটা সুযোগ পেলেও অন্যরা একেবারেই পায় না।

১ মার্চ ওই স্কুলে গিয়ে দলগতভাবে কথা হয় দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ৫৫ জন এবং বাণিজ্য বিভাগের দুজন ছাত্রীর সঙ্গে। এর মধ্যে ৮ জনের বাড়িতে কম্পিউটার, ১৫ জনের বাড়িতে ল্যাপটপ আছে। স্মার্টফোন আছে সব ছাত্রীর অভিভাবকের, কারও কারও নিজের।

ছাত্রীদের একজন জানায়, করোনাকালের পরও স্কুলের ল্যাবে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ পাওয়া যায়নি। আইসিটি বইয়ের বেশির ভাগ পড়া ক্লাসে পড়ানো হয়। আরেক ছাত্রী জানায়, গত এক বছরে মাত্র দুবার ল্যাবে গিয়ে ক্লাস করতে পেরেছে। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের ব্যবহারিক ক্লাস তারা করে খাতায় ছবি কেটে কেটে লাগিয়ে, হাতে–কলমে নয়।

স্কুলের ল্যাবের একমাত্র প্রশিক্ষক আহমাদ উল্লাহ কাসেমী প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রীর তুলনায় ল্যাপটপের সংখ্যা খুবই কম। একেকটি সেকশনের ব্যবহারিক ক্লাস দুই মাসে একবার নেওয়া সম্ভব হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা জানালেন, আরও ল্যাপটপ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

পরিবার থেকে সে সব সময় সহায়তা পেয়েছে। এখন সে রাজশাহী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
সাদিয়া আনজুম

আগারগাঁও আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের ‘শেখ রাসেল ল্যাব’–এ ১১টি ল্যাপটপ রয়েছে। ১ মার্চ স্কুলে গিয়ে দশম শ্রেণির ১৭ ছাত্রীর সঙ্গে দলগতভাবে কথা বলে জানা যায়, দুজন ছাত্রীর বাসায় কম্পিউটার ও একজন ছাত্রীর বাসায় ল্যাপটপ আছে। স্মার্টফোন আছে প্রত্যেকের। ছাত্রীরা জানায়, প্রোগ্রামিংও মুখস্থ করা হয়। কিন্তু ব্যবহারিক না হওয়ায় তারা কেউ নিজেরা প্রোগ্রামিং করতে জানে না।

২৮ ফেব্রুয়ারি সাতারকুল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়েও দেখা যায়, আইসিটির শিক্ষক ও ডিভাইসের অভাবে সেখানেও ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাসে ঘাটতি রয়েছে। আইসিটির শিক্ষক একজন। বিজ্ঞানের বিষয় পড়ান, এমন তিন শিক্ষককে দিয়েও ক্লাস করানো হয়। স্কুলটিতে ১৪ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়, যাদের মধ্যে ৪ জনের বাড়িতে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ব্যবহারের সুযোগ আছে। বাকিরা স্কুলের ওপর নির্ভরশীল।

সাতারকুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন, ইচ্ছা থাকলেও অনেক বেশি কিছু শেখানো সম্ভব হয় না।

একই দিন দক্ষিণ বনশ্রী মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে কথা হয় চার শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানায়, প্রভাতি শাখায় একজন ও দিবা শাখায় একজন আইসিটি পড়ানোর শিক্ষক রয়েছে। অধ্যক্ষ সনৎ কুমার ঘোষ বলেন, এক শাখায় একজনের বেশি আইসিটির শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছেন না।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব এবং ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’–এর প্রকল্প পরিচালক এস এ এম রফিকুন্নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের মধ্যে ল্যাব ব্যবহার শতভাগ চর্চার মধ্যে আনার নির্দেশনা রয়েছে, এটা না হলে ফাঁক থেকে যাবে।

ব্যবহার বলতে ফেসবুক–ইউটিউব

স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ বলতে তারা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। আর ইউটিউবে গান শোনে, সিনেমা দেখে। তিনজন ছাড়া বাকিদের ফেসবুকে জ্ঞানভিত্তিক কোনো গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বেশির ভাগই জানে না অনলাইনে কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া যায় না। বাংলাদেশকে উদ্ভাবনের জায়গায় দেখতে চাইলে প্রযুক্তিতে মেয়েদের সুযোগ দিতে হবে। একটু সুযোগ দিলে নারী অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

সুযোগ পেলে মেয়েরা ভালো করে

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক ২০১৯ সালে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে মেয়েদের এগিয়ে নিতে একটি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়। ওই সময় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পায় ভাঙ্গুড়া জরিনা রহিম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আনজুম। পরে সাদিয়া বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে ২০২১ সালে এককভাবে এবং ২০২২ সালে ছোট ভাই ভাঙ্গুড়া পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রকে নিয়ে দলভিত্তিক পুরস্কার পান। সাদিয়ার নেতৃত্বে তিনজনের দল এরপর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।

সাদিয়ার দল বিপণিবিতানে কাজ করা রোবট তৈরি এবং রোবট নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়ে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক জেতে। দলের আরেক সদস্য হচ্ছে রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসাইবা তাজরিন।

সাদিয়া আনজুম প্রথম আলোকে জানায়, পরিবার থেকে সে সব সময় সহায়তা পেয়েছে। এখন সে রাজশাহী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

ডিজিটাল বৈষম্য কীভাবে কাটানো যায়, জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তিতে নারী-পুরুষের সমতার জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে হবে। সহজভাবে প্রযুক্তির ভাষা সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের একদম প্রান্তে থাকা একজন মেয়েকেও প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। অসমতা দূর করতে স্কুল পর্যায় থেকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।