বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ

গ্যাস কমায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জ্বলছে না চুলা, বেড়েছে লোডশেডিং

একটি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় প্রায় দেড় মাস ধরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কম। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে এক দুর্ঘটনায় পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে গেছে। এতে এলএনজি সরবরাহ আরও কমে গেছে। গ্যাস-সংকটে পড়েছে শিল্প, আবাসিক ও বিদ্যুৎ খাত। একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে গতকাল বুধবার বেড়ে গেছে লোডশেডিং।

দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি থেকে আসে ১১০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৫ কোটি ঘনফুট। এতে দিনে এখন গ্যাস সরবরাহ নেমে এসেছে ২২৫ কোটি ঘনফুটে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কবলে পড়ে গত ২৭ মে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় সামিটের টার্মিনাল। এতে ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ কমে যায়। এটি থেকে এ মাসের মাঝামাঝি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হতে পারে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ঠিকাদারি সংস্থার পক্ষ থেকে মাটি পরীক্ষার জন্য খোঁড়াখুঁড়ির সময় আনোয়ারা-ফৌজদারহাট লাইনে ছিদ্র হয়। এতে এ পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস সঞ্চালনের সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) প্রকৌশলীরা এটি মেরামতে কাজ করছেন।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন ও মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তবে পাইপলাইন মেরামত করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।

গ্যাসের সরবরাহ কমায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রান্নার চুলা জ্বালাতে হিমশিম খাচ্ছেন গ্যাসের গ্রাহকেরা। শিল্পকারখানায় আগেই উৎপাদন কমে এসেছিল গ্যাসের অভাবে। এখন কারখানা চালাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। গতকাল বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। গ্যাস থেকে দিনে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। গতকাল বিকেলে এটি ৪ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে যায়। এতে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় ঢাকার বাইরে কয়েক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ, পিডিবি ও পিজিসিবি সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গতকাল বেলা তিনটায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। একই সময়ে উৎপাদন করা হয়েছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এতে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং দিতে হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই লোডশেডিং বাড়তে শুরু করে। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় দেড় হাজার মেগাওয়াট করে লোডশেডিং হতে থাকে।

পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির কোনো ঘাটতি নেই। কারিগরি কারণে গ্যাস সরবরাহ কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। তবে কয়লা ও তেলচালিত কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে।