কান্নাজড়িত কণ্ঠে কারাগারে কষ্টের কথা বলেছেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। এ সময় তাঁর চোখে পানি টলটল করছিল। আজ সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য অন্য আসামিসহ বাবুলকে হাজির করা হয়েছিল। এর আগে মামলার বিচারের সুবিধার্থে বাবুলকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।
২০২১ সালের ১২ মে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তাঁকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। পরে ওই মাসের ২৯ তারিখ তাঁকে ফেনী কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এই মামলার শুনানির প্রতিটি দিনে ফেনী থেকে তাঁকে এনে আদালতে হাজির করা হচ্ছিল।
আজ এই মামলায় বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আমলে নিয়ে তাঁকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার অনুমতি দেন।
আদালত সূত্র জানায়, ‘বিচারক আদেশ পড়ে শোনানোর শুরুতে বলেন, যেহেতু মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তাই রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি মঞ্জুর করছি।’ তখন আসামির কাঠগড়ায় থাকা বাবুল বলেন, ‘আমার বক্তব্য আছে। চট্টগ্রামে আমি অনেক দিন চাকরি করেছি। সে সময় বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করেছি এমন অনেক আসামি এখন দণ্ডিত হয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে আছে। আর যেখানে (চট্টগ্রাম কারাগারে) আমাকে রাখা হয়, সেখানে মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের রাখা হয়। আমার মৃত্যুদণ্ড হয়নি।’
পরে বিচারক বলেন, ‘অসুবিধা হলে, অসুস্থ হলে বা নিরাপত্তা চাওয়ার সুযোগ আছে।’ তখন বাবুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনেকবার অসুস্থ হয়েছি; কিন্তু ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হয়নি। আমি চাই, আমাকে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানো হোক।’
পরে বিচারক বলেন, ‘অসুস্থ হলে জেল কর্তৃপক্ষ আছে। তারা ব্যবস্থা নেবে। কোর্টও দেখবেন। মামলার বিচারকাজের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হলো। চিকিৎসা বা অন্য কোনো বিষয়ে আপনারা জেল কর্তৃপক্ষ এবং প্রয়োজনে আদালতের কাছেও পরে আবেদন করতে পারবেন। অসুবিধা হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে শিফট করতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তখন বিবেচনা করা হবে।’
বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবুলকে কারাগারে ‘কনডেম সেলে’ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম কারাগার তাঁর জন্য নিরাপদ নয়। এ জন্য কারাগারে কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কান্না করেন বাবুল।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবুল আদালতকে বলেছেন, চট্টগ্রাম কারাগারে থাকলে তাঁর ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু মামলার বিচারকাজের সুবিধার্থে রাষ্ট্রপক্ষ চট্টগ্রামে রাখার আবেদন করেছেন আদালতে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাধ্যক্ষ এমরান আহমেদ আজ রাতে বলেন, কারাগারে প্রত্যেক বন্দীকে নিরাপত্তার মধ্য রাখা হয়।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় মাহমুদাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরদিন ৬ জুন বাবুল বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, অন্য নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের জেরে তাঁর পরিকল্পনায় স্ত্রী মাহমুদাকে খুন করা হয়। এ জন্য তিনি সোর্সের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন। বাবুল ছিলেন এই মামলার বাদী।
বাবুল ছাড়াও অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য ছয় আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া। অভিযোগপত্রভুক্ত সাত আসামির মধ্যে বাবুল, ওয়াসিম, শাহজাহান ও আনোয়ার কারাগারে। এহতেশামুল জামিনে, কামরুল শিকদার মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালু শুরু থেকে পলাতক।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরের মাসের ১০ অক্টোবর আদালত তা গ্রহণ করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সঙ্গে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মকর্তার সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের জেরে বাবুলের পরিকল্পনায় মাহমুদাকে খুন করা হয়।
আগামী ৯ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর দিন ধার্য করেছেন আদালত।