আত্মহত্যা প্রতিরোধের বার্তা দিয়ে নিজেই বেছে নিলেন সে পথ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তায় জন্য একটি কনসার্টে উপস্থাপনা করেন অবন্তিকা। সেখানে তিনি আত্মহত্যা প্রতিরোধের বার্তা দেন
ছবি: ফেসবুক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তায় জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত কনসার্টে উপস্থাপনা করেছিলেন ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। কনসার্টে উপস্থিত হাজারো শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যা প্রতিরোধের বার্তা দেন তিনি। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিলেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে কুমিল্লা শহরে বাড়িতে আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন অবন্তিকা। তাতে সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে সহকারী একজন প্রক্টরের বিরুদ্ধে ছেলেটির পক্ষ নিয়ে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও করেছেন তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন অবন্তিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার বন্ধু ও সহপাঠীরা বলেছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অবন্তিকা উপস্থাপনা করতেন হাসিমুখে।

সহপাঠীরা বলছেন, ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালদের খাবার দিতেন অবন্তিকা

সহপাঠী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, অবন্তিকা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতেন। ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালদের খাবার দিতেন। বিপদে পড়লে উদ্ধার করতেন।

জান্নাতুল আরও বলেন, অবন্তিকা খুব হাসিখুশি ছিলেন। প্রথম সেমিস্টারে তিনি বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে থাকতেন সব সময়। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় শিক্ষকেরা তাঁকে স্নেহ করতেন।

বিভাগীয়ভাবে সমস্যাটির সমাধান করা হলে অবন্তিকা আত্মহননের পথ বেছে নিতেন না বলে মনে করেন তাঁর সহপাঠী ও বন্ধুরা।

বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করতেন ও উপস্থাপনা করতেন অবন্তিকা

রঙ তুলি ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত ছিলেন অবন্তিকা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সাইফ বাবু প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবন্তিকা আমাদের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পাশাপাশি তারা আগ্রহের বিষয় ছিল পাবলিক স্পিকিং ও লিডারশিপ। কুমিল্লা জেলার প্রত্যন্ত শিক্ষার্থীদের কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে কাজ করতে চাইতেন। পাশাপাশি মেন্টাল হ্যারাসমেন্ট (মানসিক নিপীড়ন) নিয়ে অনেক কাজ করেছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে যে গত দুই বছর থেকে হ্যারাসমেন্টের মধ্যে যাচ্ছেন, তা আমরা বুঝে উঠতে পারিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত তারেক হাসান বলেন, ‘প্রক্টর অফিস থেকে বারবার হ্যারেজমেন্টের শিকার হচ্ছেন বলেছিলেন আপু। ক্যাম্পাসে ফিরে এবার উপাচার্যের কাছে আবেদন করবেন বলেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে যায়।’

বাংলাদেশ বেতারেও অবন্তিকা উপস্থাপনা করতেন বলে জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফখর উদ্দিন। অবন্তিকাকে নিশ্চয়ই এমন যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে, যা সহ্য করতে পারেননি বলেন তিনি।