বান্দরবানের থানচিতে দুটি ব্যাংক থেকে টাকা লুট হওয়ার সময় বাধা দিতে যাচ্ছিল ওসিসহ পুলিশের একটি দল। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে দুই দফা গুলি চালায় অস্ত্রধারীরা। তারা ব্যাংক কর্মকর্তা, ২ বিজিবি সদস্য, ৯ জন পুলিশ সদস্য ও ব্যাংকে আসা লোকজনসহ প্রায় ৪০ জনকে জিম্মি করে। পুলিশ গুলি চালালে জিম্মিদের গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়।
পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা গতকাল বুধবার এ ঘটনা ঘটায় বলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সদস্যরা বলছেন, পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় না দিলে অনেক লাশ পড়ত।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে থানচি উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখার সামনে গিয়ে দেখা যায় সতর্ক পাহারায় রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। ব্যাংক দুটি থেকে ১০০ গজ দক্ষিণে পাহাড়ের ওপর থানচি থানা।
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জসীমউদ্দীন আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক লুটের খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, তখন থানার প্রধান ফটকের সামনে থেকে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। একই সঙ্গে থানার পেছন দিক থেকেও গুলি করা হয়। পরে বিকল্প পথে পুলিশ ফোর্স নিয়ে ব্যাংকের সামনে যখন যাই, ততক্ষণে অস্ত্রধারীরা টাকা নিয়ে চলে যায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আমরা জানতে পারি দুটি ব্যাংকের ভেতরে ব্যাংক কর্মকর্তা, টাকা তুলতে আসা দুই বিজিবি সদস্য, পুলিশ সদস্য, ব্যাংকের গ্রাহকসহ ৪০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে অস্ত্রধারীরা। এসব লোককে বাঁচাতে পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পারি, গতকাল ঘটনাস্থলে তিনটি চাঁদের গাড়ি ছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে শাজাহান পাড়ায় অস্ত্রধারীদের ৪০ জনের আরেকটি দল ছিল।’
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, থানচি থানার চারপাশে কোনো সীমানা দেয়াল কিংবা ঘেরা নেই। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সদস্যরা জানান, গতকাল থানার দক্ষিণ–পশ্চিম পাশ থেকে গুলি করা হয়। একই সঙ্গে প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অস্ত্রধারীরা ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে।
ঘটনার সময় সোনালী ব্যাংক থানচি শাখায় দায়িত্বরত একজন পুলিশ কনস্টেবল আজ প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে চাঁদের গাড়িতে এসে চার থেকে পাঁচজন অস্ত্রধারী ব্যাংকে ঢুকে পড়ে। ঢোকার আগে তারা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তারা ব্যাংকে ঢুকে কর্মকর্তাদের দিকে অস্ত্র তাক করে। পুলিশ অ্যাকশনে গেলেই সবার লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়।
রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে হামলা করেও অস্ত্রধারীরা কোনো টাকা নিতে পারেনি। তবে গতকাল বুধবার বেলা একটার দিকে থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে তারা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
হামলাকারীরা রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিজামুদ্দিনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করেছে।
রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির সঙ্গে কেএনএফ জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, থানচিতে হামলার সঙ্গেও একই গোষ্ঠী জড়িত।
কেএনএফ পাহাড়ের অপেক্ষাকৃত নতুন সশস্ত্র সংগঠন। তারা ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ আলোচনা হয় গত ৫ মার্চ। এরপর হামলার ঘটনা ঘটল।
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক লুটের ঘটনার পর থেকে থানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য থানায় যুক্ত হয়েছে। ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।