সরকারি সংস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য থেকে প্রধান পদে নিয়োগ হয় না। সাবেক ও বর্তমান আমলাদের এসব প্রতিষ্ঠানে ‘পুনর্বাসন’ করা হয়। ফলে বিশেষায়িত কোনো প্রতিষ্ঠানই সফল হয় না।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সরকারের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্যে ‘অসম প্রতিযোগিতা’ কমানো এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন করার পর ২০১৬ সালে কমিশন গঠন করা হয়েছিল।
আইনের যাত্রার ১১ বছর পরও প্রতিযোগিতা কমিশনকে তেমন কোনো ‘দৃশ্যমান’ ভূমিকায় দেখা যায় না। এখন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন একজন সাবেক আমলা। তিনি পড়াশোনা করেছেন প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে। চাকরিজীবনে কখনো তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে, কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, কখনো পর্যটন করপোরেশনে, কখনো জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে ছিলেন। গত নভেম্বরে তিনি প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের মতো সংস্থা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা কমিশন। মার্কিন কমিশনের চেয়ারপারসন কলম্বিয়া ল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক লিনা এম খান। একচেটিয়া বাজার বিষয়ে তিনি একজন দক্ষ ব্যক্তি। ২০২২ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁকে ফেডারেল ট্রেড কমিশনের চেয়ারপারসন নিয়োগ দেন। সিনেটের ভোটাভুটিতে জয়ী হলে লিনা খান চেয়ারপাসন পদে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান।
নিম্ন আয়ের দেশের মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হওয়া যায় না। অর্থনীতি ও প্রতিষ্ঠানকে সমানতালে দৌড়াতে হয়।জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ
লিনা খানকে নিয়োগ দেওয়ার পর মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অ্যামাজন ও ফেসবুক ফেডারেল ট্রেড কমিশনে এই আবেদন করে, যেন লিনা খান ওই দুই কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্তে কোনো ভূমিকা না রাখতে পারেন। কারণ, অতীতে অ্যামাজন ও ফেসবুকের বাজারক্ষমতা নিয়ে তিনি সমালোচনায় মুখর ছিলেন। সুতরাং তিনি নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন না।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সংস্থাটি ‘দাঁড়াতেই’ পারল না। ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এই সংস্থাকে কার্যকর করার বদলে সাবেক আমলাদের ‘পুনর্বাসন কেন্দ্র’ বানিয়ে ফেলেছে।
শুধু প্রতিযোগিতা কমিশন নয়, সরকারের বিভিন্ন বিশেষায়িত সংস্থা, কমিশন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমলাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেখানে তাঁরা নিয়োগ পাচ্ছেন, সেই সংস্থার কাজের বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের পড়াশোনা বা দক্ষতা কোনোটিই থাকে না। যেমন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন একজন কীটতত্ত্ববিদকে, মশক নিবারণী দপ্তরের প্রধান গণিতে পড়া একজন উপসচিব, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ভেটেরিনারি মেডিসিনে পিএইচডি ডিগ্রিধারী। একইভাবে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পড়েছেন ইংরেজিতে, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) চেয়ারম্যান পড়েছেন ব্যবসায় প্রশাসনে—এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি।
দেশের ৬০টি কমিশন, বোর্ড, কর্তৃপক্ষ, ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য সংস্থায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪২টি সংস্থায় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক আমলাদের। বাকিগুলোতে রয়েছেন শিক্ষক, বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, প্রেষণে আসা সেনা কর্মকর্তা এবং অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
ভারত চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর পর দেশের বিশেষায়িত সংস্থা ও সরকারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে আমলাদের নিয়োগের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই বলছেন, ভারতের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র ইসরোর চেয়ারম্যান শ্রীধারা সোমনাথ অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার।
বিপরীতে বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) চেয়ারম্যান কৃষিতে স্নাতক। এখানে আসার আগে তিনি ছিলেন পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্পারসোর বর্তমান চেয়ারম্যানের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হলো, তিনি যে সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই বিষয়ে তিনি দক্ষ কি না। তিনি যদি মহাকাশ গবেষণায় দক্ষ হন, তাহলে তাঁকে কেন পর্যটন করপোরেশনে পাঠানো হয়েছিল।
বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে বর্তমান ও সাবেক আমলাদের নিয়োগের বিষয়ে লোকপ্রশাসনের শিক্ষক, সাবেক আমলা ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলছেন, প্রশাসনিক বিষয়ে দক্ষ—এই যুক্তি দেখিয়ে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে আমলাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজ, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের কাজ দেখভাল করবেন আমলারা। আর বিশেষায়িত কাজ হবে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে।
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা দুটি। প্রথমত, অনেকটা শাস্তি হিসেবে অথবা কোথাও পদ না থাকলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে আমলাদের পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে তাঁরা বদলির চেষ্টা করেন অথবা শুধু চাকরি করেন। প্রতিষ্ঠান এগিয়ে নিতে তাঁদের আগ্রহ থাকে না।
দ্বিতীয়ত, আমলারা গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন, যা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মীরা মানতে পারেন না। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সততা ও দক্ষতা না থাকলে এবং নাক উঁচু স্বভাব হলে সমস্যা আরও প্রকট হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মনে দুঃখ নিয়ে কেউ কোনো সংস্থার প্রধান হলে তাঁর পক্ষে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেওয়া বা দিগ্দর্শন দেওয়া সম্ভব নয়। এখন ‘বেঠিক’ জায়গায় ‘সঠিক’ লোককে নিয়োগের প্রবণতা দেখা যায়। সাধারণত বিশেষজ্ঞরা ভালো প্রশাসক হন না। তারপরও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত ব্যক্তিকে প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া দরকার, যাতে তাঁরা কারিগরি দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
অধ্যাপক সালাহউদ্দিন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এখনো তাদের গুণগতমান ও মর্যাদা ধরে রেখেছে। সেখানে সব সময়ই গবেষকেরা মহাপরিচালক পদে ছিলেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি বিশেষায়িত সংস্থা। এই সংস্থার তৈরি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই জাতীয় নীতিনির্ধারণ হয়। অথচ বিবিএস যথাসময়ে পরিসংখ্যান তৈরিতে ‘ভয়ংকরভাবে’ পিছিয়ে। পরিসংখ্যানের মান নিয়েও রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন।
বিবিএস পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন। খোদ এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম এ মান্নান ও প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বিভিন্ন সময় সংস্থাটির পরিসংখ্যানের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আর সক্ষমতার অভাবে বিবিএস যে দুর্বল হয়েছে, তা সংস্থাটির কর্মকর্তারাই মনে করেন।
পরিসংখ্যান আইনে বলা আছে, বিবিএসের মহাপরিচালক ও উপমহাপরিচালক সরকার নিয়োগ দেবে। সরকার সাধারণত প্রশাসন ক্যাডার থেকে এখানে নিয়োগ দেয়।
১৯৭৪ সালে চারটি সরকারি দপ্তরকে একীভূত করে বিবিএস প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারের একটি পরিসংখ্যান ক্যাডারও রয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ পরিসংখ্যান ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে আজ পর্যন্ত বিবিএসে মহাপরিচালক করা হয়নি। ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবের কথা বলে পরিসংখ্যান ক্যাডার এখন প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হতে চাইছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি বিশেষায়িত সংস্থার একটি হচ্ছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্যই প্রশাসন ক্যাডারের। ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়মিত পাল্টায়, কখনো তিন মাস, কখনো ছয় মাস, কখনোবা এক বছর পর। এটিকে বলা হয় ‘ডাম্পিং’ পদ।
নিরাপদ খাদ্য, পরিবহন ব্যবস্থাপনা, দূষণরোধ, ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন, বিজ্ঞান গবেষণা—কোনো ক্ষেত্রেই সফল প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া কঠিন। যদিও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই নিজেদের সফল দাবি করে।
এর বাইরে সরকারি করপোরেশনগুলোয় সাধারণত আমলাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। বছরের পর বছর সেগুলো লোকসান দিতেই থাকে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে কোম্পানি করা হয়েছিল এই লক্ষ্যে, এটি বাজারে থাকা অন্য এয়ারলাইনসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। সেখানে বিদেশি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করা হবে। ২০১৩ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সাবেক কর্মকর্তা কেভিন জন স্টিলেকে বিমানের প্রথম বিদেশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন অবশ্য বিমানে প্রশাসন ক্যাডার থেকে এমডি করা হচ্ছে।
শুধু আমলাদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে যে সরকারি সংস্থা পিছিয়ে যাচ্ছে তা নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব দায়ী। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ‘অযোগ্য’ ও ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ব্যক্তিদের নিয়োগ।
কেউ কেউ অভিযোগ তুলে পাল্টা যুক্তি দেখাচ্ছেন, নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উপাচার্যেরা ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম করছেন। নিজেদের সন্তান, শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়োগ দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মানসম্মত হতে পারছে না।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাডারের ক্ষমতার দ্বন্দ্বকেও বড় সমস্যা হিসেবে দেখেন বিশেষজ্ঞরা। দেখা যায়, মূলত প্রশাসন ক্যাডার প্রভাবশালী। পদ থাকুক না থাকুক, তাঁরা নিয়মিত পদোন্নতি পান। তাঁদের নিয়োগ দিতে বিভিন্ন বিশেষায়িত সংস্থার শীর্ষ পদ ছাড়াও মধ্যম স্তরের পদও ‘দখল’ করা হয়।
উপসচিব হলে তিন বছর পর একজন কর্মকর্তা গাড়ি কেনার ঋণ পান। মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রকল্পের গাড়ি সরকারি পরিবহন পুলে জমা না দিয়ে ব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
উপসচিব পদে প্রশাসনের বাইরে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও আসার সুযোগ রয়েছে। তবে অন্য ক্যাডার থেকে মাত্র ২৫ শতাংশ নিয়োগ পান।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংগঠিত অন্যান্য ক্যাডার আমলাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে। যেমন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একজন চিকিৎসক। স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ওই ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
কৃষি খাতেও একই চিত্র। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও গবেষণা সংস্থায় সাধারণত বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদদের সংস্থাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অবশ্য কৃষি খাতের দু-একটি প্রতিষ্ঠানে এখন প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেমন বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বারটান) নির্বাহী পরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।
বিভিন্ন বিশেষায়িত ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের সংস্থার প্রধান হিসেবে কখনোই নিয়োগ পান না। কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান করা হয় না, সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান হন না সমবায় ক্যাডারের কর্মকর্তা। পরিসংখ্যান ক্যাডারও হন না পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক।
সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের (বিপিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার মনে করেন, কে কোন ক্যাডারের, সেটি বিষয় নয়; সংস্থাপ্রধানকে হতে হবে দক্ষ, মেধাবী, দেশপ্রেমী ও কাজের প্রতি অনুরাগী। তিনি বলেন, এখন তো একটি নিয়োগও বুঝেশুনে দেওয়া হয় না।
আবদুল আউয়াল দুটি উদাহরণ দেন। একটি হলো—বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) গঠন। তাঁর মতে, ড. কুদরাত-এ-খুদার মতো ‘প্যাশনেট’ (কাজের প্রতি অনুরাগী) ব্যক্তির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় উদাহরণ আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। ইতিহাসের ছাত্র এই আমলা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। তাঁর সততা, দক্ষতা, কাজের প্রতি নেশা দেখে যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স তাঁকে ফেলো হিসেবে মনোনীত করেছিল।
সরকারি সংস্থাগুলোয় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করাটা প্রতে৵ক মানুষের জন্য জরুরি। সিটি করপোরেশন ঠিকমতো মশা মারতে পারলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারতেন, পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণ কমাতে পারলে শিশুরা নির্মল বায়ুতে শ্বাস নিতে পারত, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঠিকমতো কাজ করলে মানুষ ডিজিটাল প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারলে দেশে এত ঋণ কেলেঙ্কারি হতো না—এমন উদাহরণ আরও দেওয়া যায়।
স্বাধীনতার পরে কৃষি খাতে নতুন নতুন ফসল ও ফলের জাত এসেছে বলেই দেশের মানুষের খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে চায়। এখন কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ না দেখে প্রতিষ্ঠান গড়ায় নজর দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের উন্নতির ধারা ধরে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন জরুরি। নিম্ন আয়ের দেশের মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হওয়া যায় না। অর্থনীতি ও প্রতিষ্ঠানকে সমানতালে দৌড়াতে হয়।