জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত সম্রাটের পাসপোর্ট তাঁর জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন সম্রাটের আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন।
আইনজীবী আফরোজা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেল (সম্রাট) কিডনিসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আগেই আবেদন করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে পাসপোর্ট তাঁর জিম্মায় দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয় আদালতের কাছে। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী আফরোজা আরও বলেন, সম্রাটের পাসপোর্ট তাঁর জিম্মায় দেওয়ার আদেশ হয়েছে। তবে আদালত শর্ত দিয়েছেন, পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য সম্রাট এক মাস বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন। আর তিনি তাঁর পাসপোর্ট সর্বোচ্চ দুই মাস নিজের জিম্মায় রাখতে পারবেন। পরে তাঁকে তাঁর পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এই মামলায় আজ অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই মামলায় জামিনে থাকা সম্রাট আজ আদালতে হাজির হন। তাঁর আইনজীবী অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আগামী ৬ জুলাই শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।
মামলাটিতে ২০২১ সালের ২২ আগস্ট একই আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন সম্রাট। এর আগে তিনি আরও তিনটি মামলায় জামিন পান। এগুলো মাদক, অর্থ পাচার ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। অভিযোগপত্রে তাঁর বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
এ ছাড়া অভিযোগপত্রে ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এ টাকা তিনি পাচার করেছেন। গত বছরের ২২ মার্চ অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তাঁর সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তখন র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গ্রেপ্তারের সময় সম্রাট ও আরমান মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের কাছে বিদেশি মদ ছিল। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁদের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।
গ্রেপ্তারের পর সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয়। পরে সম্রাটকে নিয়ে তাঁর কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে বন্য প্রাণীর চামড়া, মাদক ও অস্ত্র পাওয়ার কথা বলা হয়। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।