নিজের একটা বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের স্বপ্ন থাকে প্রায় সবারই। এই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অনেকেই জীবনের সব সঞ্চয় ব্যয় করেন। তবে অনেক সময় সাধ আর সাধ্যের মধ্যে কোনো কূলকিনারা করতে পারেন না। আবার অনেকেই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে ফেলেন। সঠিক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে নিজের একটা বাড়ির স্বপ্ন আর অধরা থাকে না।
মানুষের এই স্বপ্ন পূরণের অংশীদার হতে পাশে আছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্র্যাক ব্যাংকের বহুমুখী হোম লোন সুবিধা আপনার স্বপ্ন পূরণের যাত্রাকে করবে আরও সহজ।
সমাজের সব ধরনের আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে ব্র্যাক ব্যাংক তিন ধরনের লোন সুবিধা দিয়ে থাকে। ডেভেলপারের কাছ থেকে অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়, নিজের জায়গায় নতুন বাড়ি নির্মাণ এবং সেমি পাকা বাড়ি করার জন্য লোন সুবিধা দেয় ব্যাংকটি। ফলে হোম লোন চলে এসেছে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে। নিজের একটি বাড়ি, নিজের একটি স্থায়ী ঠিকানার স্বপ্ন সত্যি করা হয়েছে আরও সহজ।
কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে একজন গ্রাহক সহজেই হোম লোন পেতে পারেন। যেমন বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে হোম লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের নিজের একটি জমি থাকতে হবে। এ ছাড়া গ্রাহক চাইলে ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের উদ্দেশ্যে হোম লোন নিতে পারেন। সাধারণত এই দুই ধরনের গ্রাহককে ব্র্যাক ব্যাংক হোম লোন দিয়ে থাকে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিজে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে যেমন চাহিদামতো জমি পাওয়া কঠিন, অন্যদিকে জমির দামও অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হিসেবে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবেন। এর সূত্র ধরে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে সেগুলো ফ্ল্যাট হিসেবে বিক্রি করছে। মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে স্থায়ী আবাস হিসেবে মানুষ ফ্ল্যাট কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছে। সুলভ মূল্যের কারণে ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে গ্রাহকদের আগ্রহ বেশি। তবে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও ক্রেতাদের বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। যেমন:
• গ্রাহক যে প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির ফ্ল্যাটটি কিনবেন, তার মালিকানার প্রমাণপত্র।
• মূল জমির আমমোক্তারনামার সঠিকতা।
• প্রজেক্টের জমির নামজারি ঠিক আছে কি না, দেখার পাশাপাশি জমির হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিষয়টি।
• ফ্ল্যাটটির ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র।
• বিক্রির জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি সরেজমিনে নকশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা।
• ঋণের জন্য ফ্ল্যাটটি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক আছে কি না।
• ফ্ল্যাটটি আগে অন্য কারও কাছে বিক্রি হয়েছে কি না।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ঝামেলা এড়াতে সব ধরনের চার্জ, রেজিস্ট্রেশন ফি এবং দায়দায়িত্ব স্পষ্টভাবে জেনে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, কোনো গ্রাহক অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য হোম লোনের আবেদন করলে ব্র্যাক ব্যাংক নিজেদের লিগ্যাল ও টেকনিক্যাল টিমের মাধ্যমে ক্রয়কৃত অ্যাপার্টমেন্টের সবকিছু খতিয়ে দেখে গ্রাহকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সরকারি–বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বাড়ির মালিক এবং স্বনির্ভরশীল ব্যক্তি ব্র্যাক ব্যাংকের হোম লোন নিতে পারবেন।
হোম লোন নিতে যেসব কাগজপত্র লাগবে
ব্র্যাক ব্যাংক হোম লোনের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, আয়সম্পর্কিত কাগজপত্র, গত এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ই-টিআইএন ও ট্যাক্স রিটার্ন কপি, জমির মালিকানা–সংক্রান্ত দলিলের ফটোকপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
হোম লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় গ্রাহককে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক ব্যতিক্রমী সুবিধা নিয়ে এসেছে। ব্যাংকটি দিচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে লোন পাওয়ার নিশ্চয়তা। গ্রাহকেরা ২০ থেকে ২৫ বছর মেয়াদে সহজ কিস্তিতে এই লোন পরিশোধ করতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, একজন গ্রাহক চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সম্পূর্ণ বা আংশিক লোন পরিশোধ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ‘হিডেন চার্জ’ নেই। এভাবে স্বচ্ছতা বজায় রেখে গ্রাহকদের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে উঠেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
গ্রাহকের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে ব্র্যাক ব্যাংক সব সময় বাজারের সেরা রেটে হোম লোন অফার করে থাকে। বর্তমানে ১১ শতাংশ হারে হোম লোন দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। উল্লেখ্য, হোম লোনের সুদের হার সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল। সারা দেশে ব্র্যাক ব্যাংকের ১৮৭টি ব্রাঞ্চ, ৪৫টির বেশি সাব-ব্রাঞ্চ এবং দেশের প্রতিটি অঞ্চলে কাজ করা ব্র্যাক ব্যাংকের দক্ষ সেলস টিমের মাধ্যমে হোম লোনের আবেদন করা যাবে।
বিশেষ করে দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে ব্র্যাক ব্যাংকের ‘অ্যাফোর্ডেবল হোম লোন’ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলেই যেকোনো ব্যক্তি ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাফোর্ডেবল হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিজের জমিতে সেমি পাকা বাড়ি অথবা স্বপ্নের একটা নীড় অথবা প্রাণের শহরে নিজের একটা ফ্ল্যাটবাড়ি বানানোর জন্য লোন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে ‘অ্যাফোর্ডেবল হোম লোন’–এর আওতায়।
আবেদনের এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন (অ্যাপ্রুভাল) পেয়ে যেতে পারেন আবেদনকারী। তবে গ্রাহকের হাতে টাকা পৌঁছানোর বিষয়টি কয়েকটি জিনিসের ওপর নির্ভর করে। বাড়ির কাজ কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে, কখন টাকা লাগবে, কী পরিমাণ টাকা লাগবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মর্টগেজ অনুমতিপত্র—এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গ্রাহকের হাতে টাকা পৌঁছাবে।
অধিক নিরাপত্তা এবং বিতরণকৃত লোনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাড়ি নির্মাণে ক্রেতার প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে টাকা দিয়ে থাকে ব্র্যাক ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা সরেজমিনে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ব্যাংককে টাকা প্রদানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তাই নিজের একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের স্বপ্ন এখন আর অসম্ভব নয়। আপনার স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে হোম লোন নিয়ে পাশে আছে ব্র্যাক ব্যাংক। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও লোনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আবেদনের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন