বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেছেন, কোনো হত্যাই কারও কাছে কাম্য নয়। সীমান্ত হত্যা শুধু বিজিবিকে নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও (বিএসএফ) অস্বস্তিতে ফেলে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চার দিনব্যাপী বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৩তম সীমান্ত সম্মেলন–পরবর্তী মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বিজিবি মহাপরিচালক। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পিলখানা বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘যখন সীমান্ত সম্মেলন হচ্ছে, তখন যদি সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটে, তাতে আমরা যতটা অপ্রস্তুত থাকি, আমার কাছে মনে হয় বিএসএফ তার চেয়ে বেশি অপ্রস্তুত থাকে। এগুলো কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়টি আমি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেছি। এ ঘটনা শুধু বিজিবিকে নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও (বিএসএফ) অস্বস্তিতে ফেলে।’
বিএসএফের মাঠপর্যায়ে দায়িত্বে থাকা সদস্যদের মধ্যে উৎসাহ বা মোটিভেশন এবং নজরদারির অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমি এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়েছি সম্মেলনে। বিএসএফের এসব বিষয় যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে।’
ভারতের গরু পাচারে বিজিবি টিকিট দিয়ে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজিবির প্রধান বলেন, বিজিবি টিকিট দিয়ে এ ধরনের কোনো কাজ করছে না।
মাদক প্রসঙ্গে বিজিবির প্রধান বলেন, ‘বেশির ভাগ মাদক আসছে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে। বিজিবি সীমান্তে প্রচুর মাদক উদ্ধার করছে। সেখানে আমাদের বিওপি আছে ৮১৭টি। পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার এলাকা একেকটা বিওপির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এসব এলাকা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক লোকের প্রয়োজন হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে বিজিবির একটা বড় ভূমিকা থাকে। এ জন্য অনেক আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। আমি আশা করি, নির্বাচনের সময় বিজিবির ওপর যে দায়িত্ব আসবে, সেটা আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করব।’
বিএসএফের দাবি, বাংলাদেশ থেকে বম জনগোষ্ঠী ভারতের মিজোরামে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি প্রধান বলেছেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সন্ত্রাসীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে কিছু ব্যক্তিকে জোরপূর্বক মিজোরামে পাঠিয়ে থাকতে পারেন।
কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির প্রধান নাথান বম সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন, আবার আসছেন। সীমান্তে এত নজরদারি থাকার পরও এটা কীভাবে হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবির প্রধান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম খুবই দুর্গম এলাকা। এমনও জায়গা রয়েছে, সেখানে এখনো কারও পায়ের চিহ্ন পড়েনি। কুকি চিনের বিষয়ে আমাদের যৌথ অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিজিবিও কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি সীমান্ত দিয়ে কেউ যাতে বাইরে যেতে না পারেন এবং ভেতরে আসতে না পারেন।’
বিজিবি প্রধান আরও বলেন, বিজিবি কুকি চিনের একটা ক্যাম্প দখল করেছে। সেখান থেকে অনেক অস্ত্র-গুলি, তাদের ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চলছে। যেসব স্থান সন্ত্রাসমুক্ত করা হয়েছে, সেখানে বিওপি নির্মাণ করে কাজ চলছে। নাথান বমকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিকভাবে আলোচনার বিষয়। আমরা বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা করেছি, সীমান্ত সিল (বন্ধ) করে দেওয়ার বিষয়ে, যাতে কেউ এপাশ থেকে ওপাশে যেতে না পারেন। নাথান বমকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
সীমান্ত সম্মেলনে দুই বাহিনী মধ্যে গৃহীত সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন ও প্রশিক্ষণ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এম এম খায়রুল কবীর। তিনি বলেন, আন্তসীমান্ত অপরাধ যেমন মাদক পাচার, অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র চোরাচালান রোধে অপরাধীদের তথ্য আদান-প্রদানে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে পূর্বানুমতি ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজ না করতে উভয় দেশ রাজি হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বন্ধ থাকা পাঁচটি উন্নয়নমূলক কাজ চালু করার অনুমোদন পাওয়া গেছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রিজিয়ন কমান্ডার, যশোর) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক (বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো চিফ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কে এম আজাদ, উপপরিচালক কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাসান ও পরিচালক লে. কর্নেল তসলিম এহসান।