আদালতে হট্টগোল, ধাওয়া–বাগ্‌বিতণ্ডা, পুলিশ মোতায়েন

মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। ঢাকা, ৩০ মে
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা ধাওয়া করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বের করে দেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আরও দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আগামীকাল বুধবার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আজ ঠিক ছিল। দুদকের পক্ষে একজন আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। তখন বিএনপিপন্থী একদল আইনজীবী আদালত কক্ষে প্রবেশ করে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এতে আদালতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরপর বিচারক এজলাস ছেড়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা আদালতকক্ষে গিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ধাওয়া দিয়ে বের করে দেন। এরপর আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। আর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অবস্থান নেন ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে বিএনপিপন্থী ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বিকেল ছয়টা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য আদালতের সামনে অবস্থান করছিলেন।

ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। ঢাকা, ৩০ মে

দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আদালত আরও দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। পরে আগামীকাল বুধবার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।

এর আগে গতকাল সোমবার তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা হলেন এবি ব্যাংকের কর্মকর্তা এস এম মুসা করিম, ওবায়দুর রশীদ ও এমরান আহমেদ।

গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।  দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল।

এ মামলায় গত ৫ জানুয়ারি আদালত তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন। গত বছরের ১ নভেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন।


আইনজীবী ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তাঁর মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত তারেক রহমান এক যুগের বেশি সময় ধরে সপরিবার যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তারেক রহমানকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।