জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা একের পর এক সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত তাঁর দুই স্ত্রী, সন্তান, ভাই–বোনসহ নিকটজনদের নামে ছয় জেলায় জমি, ফ্ল্যাট, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রিসোর্টসহ নানা সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর বাইরে পুঁজিবাজারেও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে।
আলোচিত এই কর্মকর্তা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা এখন পর্যন্ত ৬৫ বিঘা (২ হাজার ১৪৫ শতাংশ) জমি, ৮টি ফ্ল্যাট, ২টি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং ২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে। তাঁর নামে প্রায় ২৮ বিঘা জমি ও ৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে; এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরে একটি ভবনেই রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট। কলেজশিক্ষক লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।
গতকাল রোববার মতিউর রহমানকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দিন মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রথম আলোর অনুসন্ধান এবং উপজেলা নির্বাচনের সময় লায়লা কানিজের দেওয়া হলফনামা ও আয়কর বিবরণী থেকে সম্পদের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় মতিউর রহমান অধিকাংশ সম্পদ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নামে করেছেন।
সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে। তাঁর নামে প্রায় ২৮ বিঘা জমি ও ৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে; এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরে একটি ভবনেই রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট। কলেজশিক্ষক লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।
এবার ঈদুল আজহার সময় এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। ছেলের বিলাসী জীবনযাপনের সূত্র ধরেই মতিউরের সম্পদের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের কাউকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ঈদের পর কর্মস্থলেও যাননি তিনি। গতকাল রোববার মতিউর রহমানকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দিন মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এসব সম্পদের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মতিউর রহমানের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা কয়েক দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবার বসবাসের স্থান হিসেবে ঢাকার যে তিনটি ঠিকানা ব্যবহার করেছে, সেসব বাসায় গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
লায়লা কানিজ নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় নিজের নামে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, যশোর ও নাটোরে মোট ৮৪৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ (২৫ দশমিক ৭০ বিঘা) জমি থাকার কথা বলেছেন। ফ্ল্যাটের হিসাব দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডের এক ভবনেই চারটি ফ্ল্যাটের নম্বর উল্লেখ করেছেন। যার মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। যদিও ওই ভবনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, ভবনটির একেকটি তলায় চারটি করে অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। একেকটির আয়তন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুট। নির্মাণের শুরু থেকে হস্তান্তর পর্যন্ত প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সর্বনিম্ন ধরলেও এই চারটির দাম পড়ে অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বাইরে আরও একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা হলফনামায় উল্লেখ থাকলেও ঠিকানা দেওয়া হয়নি। তবে সেটার মূল্য দেখানো হয় সাড়ে ৫৫ লাখ টাকা। তিনি একটি মৎস্য খামারের মালিক বলেও উল্লেখ করেছেন।
লায়লা কানিজ মোট যে জমির হিসাব দিয়েছেন, তার মধ্যে কেবল ৫ জেলার ১৩টি অকৃষি জমির অর্জনকালীন দাম দেখিয়েছেন ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বাকি ৯টি অকৃষি এবং কৃষি জমিগুলোর দাম উল্লেখ করেননি।
হলফনামার বাইরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল মৌজার চারটি দাগে লায়লা কানিজের নামে আরও দুই বিঘা (৬৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ) জমির সন্ধান পাওয়া গেছে ভূমি অফিসের নথি থেকে।
লায়লা কানিজ মোট যে জমির হিসাব দিয়েছেন, তার মধ্যে কেবল ৫ জেলার ১৩টি অকৃষি জমির অর্জনকালীন দাম দেখিয়েছেন ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বাকি ৯টি অকৃষি এবং কৃষি জমিগুলোর দাম উল্লেখ করেননি।
২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর বিবরণীতে মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ তাঁর মোট সম্পদ দেখিয়েছেন ১০ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার টাকা। তাঁর হাতে এবং ব্যাংকে নগদ ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। পুঁজিবাজারের শেয়ার বিক্রি থেকে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা মুনাফার কথাও উল্লেখ করেছেন।
নির্বাচনের হলফনামায় লায়লা কানিজ তাঁর পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। নিয়মানুযায়ী, হলফনামায় প্রার্থীর স্বামী বা স্ত্রীর সম্পদের বিবরণও দিতে হয়। কিন্তু লায়লা কানিজ স্বামীর নাম উল্লেখ না করে বাবার নাম উল্লেখ করেছেন।
নরসিংদীর রায়পুরায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লায়লা কানিজ (লাকী) ছিলেন রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। বাবা কফিল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন খাদ্য কর্মকর্তা। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে লায়লা কানিজ সবার বড়। তিনি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ‘ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট’ নামের একটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি। সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন, সেই প্রশ্নও এখন সামনে এসেছে।
এসব সম্পদের বিষয়ে জানতে লায়লা কানিজের তিনটি ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে দুটি নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে, একটি নম্বরের কল গেলেও তিনি ফোন ধরেননি। প্রথম আলোর নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, কোরবানির ঈদের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ কার্যালয়েও যাননি লায়লা কানিজ।
সর্বশেষ দুই মাস আগেও মতিউর রহমান স্ত্রী শাম্মী আখতার, তাঁদের ছেলে মুশফিকুর রহমান (ইফাত), শাশুড়িসহ সোনাগাজীতে বাড়িতে এসেছিলেন। কয়েক দিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি ঢাকায় মেয়েদের বাসায় থাকেন।জসিম উদ্দিন
প্রথম আলোর সোনাগাজী প্রতিনিধি জানান, এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। প্রায় ১০ বছর আগে সোনাগাজীতে শ্বশুরের ভিটায় শাশুড়িকে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে দেন মতিউর রহমান।
সেই বাড়ি জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি দেখাশোনা করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সর্বশেষ দুই মাস আগেও মতিউর রহমান স্ত্রী শাম্মী আখতার, তাঁদের ছেলে মুশফিকুর রহমান (ইফাত), শাশুড়িসহ সোনাগাজীতে বাড়িতে এসেছিলেন। কয়েক দিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি ঢাকায় মেয়েদের বাসায় থাকেন।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্লক-ডি এর ৭/এ সড়কের ৩৮৪ নম্বর বাড়ির ৫০১ নম্বর ফ্ল্যাটকে মতিউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী লায়লা কানিজ তাঁদের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শনিবার ওই ঠিকানায় গেলে সেখানকার নিরাপত্তা প্রহরী প্রথম আলোকে বলেন, ৫০১ নম্বর ফ্ল্যাটের মালিক কে, তা তিনি জানেন না। বাড়ির ব্যবস্থাপকের ফোন নম্বর চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী জানান, ব্যবস্থাপক ফোন নম্বর দিতে নিষেধ করেছেন।
কাকরাইলে এনবিআরের কার্যালয়ের কাছেই স্কাই ভিউ মমতা সেন্টার নামের একটি আবাসিক ভবনে মতিউর পরিবারের ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। শনিবার ওই ১০ তলা বাড়ির নিচতলায় কথা হয় নিরাপত্তা প্রহরী মজনুর সঙ্গে। মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবার সেখানে থাকে কি না, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরা আসে আর যায়। এখানে নিয়মিত থাকে না। তারা এখন বাসায় নেই।’ সর্বশেষ কোরবানির ঈদের ১০ দিন আগে মতিউরকে সেই বাড়িতে দেখেছেন বলে নিরাপত্তা প্রহরী জানান।
বড় স্ত্রীর ঘরে দুই সন্তান আহমেদ তৌফিকুর রহমানের (অর্ণব) নামে ১০ লাখ ও মেয়ে ফারজানা রহমানের (ঈপ্সিতা) নামে ২০ লাখ শেয়ার রয়েছে। মতিউরের ভাই এম এ কাইয়ুম হাওলাদারের নামে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ ও নুরুল হুদার নামে দেড় লাখ এবং বোন হাওয়া নুর বেগমের নামে ২৪ লাখ ৩৪ হাজার শেয়ার রয়েছে।
পুঁজিবাজারের বাইরে পরিবার ও পরিচিতজনদের নামে কয়েকটি কোম্পানিতে মতিউর রহমান বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অন্যতম। ১৯৯৮ সালে ৪০ হাজার বর্গফুট ভবনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ তৈরির এই কারখানা। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার আগপর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্র অনুযায়ী, এই কোম্পানির ৩৪ লাখ শেয়ারের মালিক মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে। বড় স্ত্রীর ঘরে দুই সন্তান আহমেদ তৌফিকুর রহমানের (অর্ণব) নামে ১০ লাখ ও মেয়ে ফারজানা রহমানের (ঈপ্সিতা) নামে ২০ লাখ শেয়ার রয়েছে। মতিউরের ভাই এম এ কাইয়ুম হাওলাদারের নামে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ ও নুরুল হুদার নামে দেড় লাখ এবং বোন হাওয়া নুর বেগমের নামে ২৪ লাখ ৩৪ হাজার শেয়ার রয়েছে।
মতিউর রহমানের শ্যালক নেসার উদ্দিনের নামে রয়েছে ২১ লাখ শেয়ার। তিনি গ্লোবাল শুজ লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে শেয়ারের মালিক। আর গ্লোবাল ম্যাক্সের প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাকের নামে ৭৭ লাখ শেয়ার। এ ছাড়া মো. তোফাজ্জল হোসেন ফরহাদ নামের এক ব্যক্তির নামে ১৪ লাখ শেয়ার থাকার কথা উল্লেখ আছে। ফরহাদ মতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ফরহাদকে এই কোম্পানির চেয়ারম্যান আর ভাই কাইয়ুম হাওলাদারকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়েছেন তিনি।
ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত গ্লোবাল শুজ লিমিটিডের মালিকানায়ও বেনামে মতিউর রহমান রয়েছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, এই কোম্পানিতে মতিউরের মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ শেয়ার ও ছেলে তৌফিকুর রহমানের নামে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ শেয়ার রয়েছে। মতিউর পরিবারের দুই প্রতিষ্ঠান অর্ণব ট্রেডিংয়ের নামে সাড়ে ২১ লাখ শেয়ার, সিনারজির নামে ২০ লাখ ৮৫ হাজার ও গ্লোবাল ম্যাক্সের নামে ১ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া তোফাজ্জল হোসেন ফরহাদের দুই ছেলের নামে ৫১ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার রয়েছে।
প্রথম আলোর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, সরেজমিনে ওই কারখানায় গেলে সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন, মতিউর রহমান মাঝেমধ্যে কারখানায় যেতেন।
একইভাবে গ্লোবাল ম্যাক্সের নেপথ্যেও মতিউর রহমান রয়েছেন বলে জানা গেছে। মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, সেটি গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিংয়ের নামে নিবন্ধিত। দ্বিতীয় সংসারের ছেলে মুশফিকুর রহমান (ইফাত) যে গাড়িতে চড়েন, সেটি নিবন্ধিত এসকে ট্রিমসের নামে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানেরই কার্যালয়ের ঠিকানা বলা হয়েছে রাজধানীর নিকেতনের ই-ব্লক, ৮ নম্বর রোডের মুন আইল্যান্ড নামের ভবনে।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে ওই বাড়ির ব্যবস্থাপক আলিফ হোসেনকে মতিউর রহমানের ছবি দেখানো হলে তিনি বলেন, ‘এই লোকটা এখানে আগে আসত। এখন আসেন না। আটতলার সি-৮ ফ্ল্যাটে তাঁদের অফিস ছিল। এখন অফিস নাই।’
মতিউর রহমানের নামে গাজীপুরে একটি রিসোর্ট রয়েছে। ‘আপন ভুবন’ নামের ওই পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট ও রিসোর্ট গাজীপুর মহানগরীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকায়।
মতিউর রহমানের নামে সাভারে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ (দশমিক ৩৮ বিঘা) জমি রয়েছে। স্থানীয় ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার মতিউর রহমান ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর সাভারের বিলামালিয়া মৌজায় এই জমি কেনেন।
ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে মতিউর রহমানের নামে গাজীপুর সদরের খিলগাঁও মৌজায় ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ (দেড় বিঘা) জমির তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর প্রথম সংসারের ছেলে আহাম্মেদ তৌফিকুর রহমানের (অর্ণব) নামে রায়পুরার মরজাল মৌজায় দুটি খতিয়ানে ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ (প্রায় পৌনে এক বিঘা) জমি আছে।
মতিউর রহমানের নামে গাজীপুরে একটি রিসোর্ট রয়েছে। ‘আপন ভুবন’ নামের ওই পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট ও রিসোর্ট গাজীপুর মহানগরীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকায়।
সরকারি কর্মচারীদের একাংশ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বৈধ আয়ে এত সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান
ওই রিসোর্ট ও শুটিং স্পটে প্রবেশের টিকিট বিক্রয়কারী আব্দুর রাশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এটি চালু হয়েছে প্রায় ১২ বছর। পার্কের বাবুর্চি মান্নান মিয়া জানান, প্রায় প্রতি সপ্তাহে মতিউর রহমান রিসোর্টে যেতেন।
সেখানকার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতিউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী লায়লা কানিজের অনেক আগে থেকেই টঙ্গী এলাকায় আসা–যাওয়া ছিল। সেই সূত্র ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয়। পরে রাজধানীর উত্তরা থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পুবাইলের খিলগাঁও এলাকায় আমিনুল ইসলামের বাড়ির আশপাশে মতিউর রহমান তাঁর ও স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ৩৫ বিঘা জমি কেনেন।
আপন ভুবনের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাজিব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ৩৫ বিঘা কেনার পর স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে আরও জমি বার্ষিক ভাড়া ভিত্তিতে নিয়ে মোট ৬০ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই রিসোর্ট ও শুটিং স্পট। এতে আছে ১৮টি কটেজ, বিভিন্ন রাইডসহ অসংখ্য স্থাপনা। এক রাতের জন্য একেকটি কটেজের ভাড়া ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকার টিকিট কেটে সেখানে বেড়ানো যায়।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রী-পরিজনদের এত বিপুল সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের একাংশ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বৈধ আয়ে এত সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়।
[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন মাসুদ রানা, গাজীপুর; প্রণব কুমার দেবনাথ, নরসিংদী; মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ; শামসুজ্জামান, সাভার ও আমজাদ হোসেন, সোনাগাজী, ফেনী]