২৫ বছর আগে রাজধানীর বনানীর তৎকালীন ট্রাম্প ক্লাবের সামনে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণের জন্য ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাত্র ১০ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। এই ১০ জনের মধ্যে আবার ৩ জন সোহেল চৌধুরীকে খুনের অভিযোগ সমর্থন করে আদালতে সাক্ষ্য দেননি।
রাষ্ট্রপক্ষ বাধ্য হয়ে তাঁদের বৈরী সাক্ষী ঘোষণা করে জেরা করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর গাড়িচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ ১১ জন সাক্ষী মারা গেছেন। আবার গুরুত্বপূর্ণ ১২ সাক্ষীকে খুঁজে বের করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরীন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে ১২ জন সাক্ষীকে খুঁজে বের করার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু তাঁদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে হয়েছে।
১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে ডিবির তদন্তে উঠে আসে, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে খুন করা হয়। খুন হওয়ার পরের বছর আশীষ রায় চৌধুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এর দুই বছর পর (২০০১ সাল) বিচার শুরু হয়। তবে এক আসামি উচ্চ আদালতে গেলে আটকে যায় বিচার কার্যক্রম। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করেন এবং এর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন। এরপর খুনের ২৩ বছর পর ২০২২ সালে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি এই মামলার এজাহারকারী। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোর ৪টার দিকে আমার ছোট ভাই সোলায়মান চৌধুরী ওরফে সোহেল চৌধুরীর চালক সেলিম আমার তৎকালীন বাসার দারোয়ানকে ঘুম থেকে ওঠান। সেলিম আমার দারোয়ানকে জানান, আমার একমাত্র ছোট ভাই সোহেলকে রাত ৩টার সময় বনানীর ১৭ নম্বর সড়কের আবেদীন টাওয়ারের নিচে ট্রাম্প ক্লাবের কলাপসিবল গেটের সামনে আততায়ীরা গুলি করেছে। দারোয়ান এ ঘটনা আমাকে জানালে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সোহেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেছেন।
এরপর আমি জরুরি বিভাগে ছুটে যাই। সেখানে আমি আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে জানান, ময়নাতদন্ত শেষে বেলা ১১টার দিকে সোহেল চৌধুরীর মরদেহ আমার কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, ‘এরপর আমি বাসায় চলে যাই। সেখানে আমি সোহেল চৌধুরীর গাড়িচালক সেলিমকে জিজ্ঞাসা করি। সেলিম আমাকে জানায় যে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বা তার আগে সোহেল চৌধুরী তিনজন সঙ্গীকে নিয়ে ট্রাম্প ক্লাবের উদ্দেশে যায়। ট্রাম্প ক্লাবের কলাপসিবল গেট পর্যন্ত তারা যায়। তখন কতিপয় আততায়ীর বাধার সম্মুখীন হয়। আততায়ীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। আততায়ীদের মধ্যে একজন অলির ভাই সোহেলের সঙ্গী কালামের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ায়।’
তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘একপর্যায়ে আততায়ীর একজন কালামের পেটে উপর্যুপরি দুবার গুলি করে। সে সময় অলির ভাই সোহেল চৌধুরী আততায়ীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায় এবং বাধা দিতে থাকে। সে সময় অলির ভাই সোহেল চৌধুরীর বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে উপর্যুপরি দুবার গুলি করে। আততায়ীদের নিশানা ও আচরণ হতে বোঝা যায়, তারা পেশাদার খুনি। এরপর আসামিরা ফাঁকা গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে ঘটনার সময় বেশ কিছু লোক জড়ো হয়। তাদের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ জন হতে পারে। এলোপাতাড়ি গুলি চলা অবস্থায় ট্রাম্প ক্লাবের দুজন কর্মকর্তা আহত হয় বলে সেলিম আমাকে জানায়। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমি মামলা দায়ের করি। আততায়ীদের মধ্যে একজন আদনান সিদ্দিকীকে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন আটক করে। সোহেলের সঙ্গী গুলিবিদ্ধ কালাম আততায়ীদের চিনতে পারে। সোহেল চৌধুরীর চালকের কাছ থেকে জানতে পারি, পূর্বশত্রুতার জের ধরে সোহেল চৌধুরীকে খুন করা হয়েছে।’
মামলার ২ নম্বর সাক্ষী হলেন রফিকুল ইসলাম মণ্ডল। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি আবেদীন টাওয়ারে অবস্থিত ইপিক ডিজাইনার্স লিমিটেডের পিয়ন পদে কর্মরত ছিলাম। আমি সেদিন সকাল নয়টায় অফিসে আসি। আবেদীন টাওয়ারের নিচতলার কলাপসিবল গেটের পশ্চিম দিকে ৫ থেকে ৬ গজ দূরে আমি একটা পিস্তলের গুলির খোসা পেছনে লাল রং দেখত পাই। আবেদীন টাওয়ারের পূর্ব পাশের কলাপসিবল গেটের পূর্ব পাশের রাস্তায় আমি রক্ত দেখতে পাই। এরপর আমি তৃতীয় তলায় আমার অফিসে যাই। সিকিউরিটি অফিসার আনোয়ার রশিদকে খুঁজি। তাকে না পেয়ে ষষ্ঠ তলায় যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে পঞ্চম তলা থেকে ষষ্ঠ তলায় যাওয়ার সময় সিঁড়িতে গুলির মাথার অংশ শিসা দেখতে পাই।’
রফিকুল ইসলাম মণ্ডল আরও বলেন, ‘ষষ্ঠ তলায় যাওয়ার পর সিকিউরিটি অফিসার আনোয়ার রশিদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তখন গুলির বিষয়ে আমি তাঁকে জানাই। তখন আনোয়ার রশিদ আমাকে নিয়ে নিচে নামেন। তিনি গুলির খোসা দেখতে পান এবং রক্ত দেখেন। তখন আমি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করি। তাঁরা এরূপ জানান, রাত ৩টার সময় আবেদীন টাওয়ারের নিচতলায় গোলাগুলি হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সোহেল চৌধুরী মারা যান। একজন লোককে স্থানীয় লোকজন ধরেছেন। সেদিন সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ প্রথমে রক্ত, রক্তমাখা বালু সিগারেটের কাগজ দিয়ে সংগ্রহ করে। পরে পুলিশ আমাকে সঙ্গে নিয়ে একটি গুলির খোসা সংগ্রহ করে। পরে পুলিশ ভবনের সিঁড়ি থেকে গুলির শিসা সংগ্রহ করে।’
মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী হলেন দাইয়ান খান। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি মামলার ছয় মাস আগে বান্টি সাহেবের চালক হিসেবে কাজ করছিলাম। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বান্টি সাহেবকে নিয়ে রাত ১১টার সময় ট্রাম্প ক্লাবে যাই। গাড়ি পার্কিং করার পর আমাকে ক্লাবের সামনে থাকতে বলেন। তখন সেখানে সোহেল চৌধুরী সাহেব আসেন। তাঁকে ক্লাবের গেটে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তিনি ক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। গেটে লাথি মারেন এবং গালি দেন। রাত আড়াইটার দিকে সোহেল চৌধুরী ক্লাবে আসলে দুদিক দিয়ে দুটি গাড়ি আসে।’
দাইয়ান খান আরও বলেন, ‘তখন ক্লাবের কেঁচিগেট দিয়ে ঢোকার জন্য গন্ডগোল হয়। তখন গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। আমি গুলিতে আহত হয়ে নিচে মাটিতে পড়ে যাই। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর জ্ঞান ফিরে আসে। তখন শুনতে পাই, সোহেল চৌধুরী সাহেব মারা গেছেন। পরে আমি হাসপাতাল থেকে বান্টি ইসলাম সাহেবের বাসায় চলে যাই। রাতের বেলা আমি, হান্নানসহ চার থেকে পাঁচজনকে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। আমাকে ডিবি অফিসার সিরাজ স্যার জিজ্ঞাসাবাদ করেন।’
মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী হলেন রওশন আরা তুলি। খুনের অভিযোগের সপক্ষে বক্তব্য না দেওয়ায় আদালতে তাঁকে বৈরী সাক্ষী ঘোষণা করে রাষ্ট্রপক্ষ। জেরার জবাবে রওশন আরা তুলি আদালতকে বলেন, ‘আমি ১৯৯৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকার ইস্কাটনের টিএমসি ভবনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। সেখানে আফরিন সুলতানা আমার সহকর্মী ছিলেন। আমি কোনো দিন সোহেল চৌধুরীর বাসায় যাইনি। আমার বন্ধু আফরিন সুলতানা ও আমি মাঝেমধ্যে সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে কথাবার্তা বলতাম। টেলিফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলতাম। তিনি চিত্রনায়ক হিসেবে আমরা কথাবার্তা বলতাম। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। আমি সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুর পর পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছি, সত্য নয়।’
রওশন আরা তুলি জেরার জবাবে আদালতকে আরও বলেন, ‘সত্য নয় যে ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল বলে আমি পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে বলেছিলাম। সত্য নয় যে আমি সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দিয়েছি। সত্য নয় যে সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুর আগে আমি তাঁর কথামতো আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় এটিভি ব্যবসার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সত্য নয় যে আমি সোহেল চৌধুরীর সুনাম-খ্যাতি অভিজাত্য ইত্যাদিতে আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব করলে তিনি আমার প্রস্তাবে সম্মত হননি। সে কারণে তাঁর প্রতি আমার ক্ষোভ ও আক্রোশ আছে। সে কারণে তাঁকে আমি স্বামী হিসেবে দাবি করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছি।’
মামলার ৫ নম্বর সাক্ষী হলেন এনামুল হাফিজ খান। তাঁকেও রাষ্ট্রপক্ষ বৈরী সাক্ষী ঘোষণা করেন। এনামুল হাফিজ খান আদালতকে বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ২০ নভেম্বর আমি ট্রাম্প ক্লাবের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সেদিন বিকেলে পুলিশ ট্রাম্প ক্লাবের ১৫টি আইটেম জব্দ করেছিল। আমি তাতে স্বাক্ষর করেছিলাম। ১৯৯৮ সাল থেকে চাকরি করতাম। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাত ১০টা থেকে ৩টার মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমন্ত্রিত অতিথিদের গানবাজনা ও নৈশভোজের আয়োজন ছিল। এ অনুষ্ঠান নিয়ে একটা গন্ডগোল হয়। আমি অষ্টম তলার আমার অফিসে অবস্থান করার কারণে এই গন্ডগোল বা ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। আমি কাজ শেষ করে বাইরে যাওয়ার সময় জানতে পারি, সোহেল চৌধুরী নামের এক ভদ্রলোক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’
জেরার জবাবে এনামুল হাফিজ খান আদালতকে বলেন, ‘আমি ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মসে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করি। ট্রাম্প ক্লাবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কোনো নিয়োগপত্র আমার নেই। তবে বান্টি ইসলাম ট্রাম্প ক্লাবের মালিক ছিলেন। আশিষ কুমার রায় ও সুকুমার রায় আর্থিকভাবে সম্পর্কিত ও ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন। আমার পিতা আমাদের বাড়ির নিচতলা ভিডিও কানেকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক বান্টি ইসলাম। এই বান্টি ইসলামের মাধ্যমে আমি ট্রাম্প ক্লাবে চাকরি পাই।’
এনামুল হাফিজ খান আদালতকে বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী ট্রাম্প ক্লাবের সদস্য ছিলেন না। আমার দায়িত্ব পালনকালে সোহেল চৌধুরী দু–একবার এই ক্লাবে যান। আমার সামনে সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের একবার কথা–কাটাকাটি হয়েছিল। তখন আমি সোহেল চৌধুরীকে চলে যেতে বলি। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে আমার কক্ষে নিয়ে যাই। তখন সোহেল চৌধুরী চলে যায়। আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা–কাটাকাটি সম্পর্কে আমি জানি না। দাইয়্যান ও নীরব নাইট ক্লাবের নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। ঘটনার দিন দুজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হন। পরে তাঁদের আমাদের কক্ষে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।’
এনামুল হাফিজ খান জেরার জবাবে বলেন, ‘আমি জানি না, সোহেল চৌধুরী এই ট্রাম্প ক্লাব বন্ধ করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে ক্লাবে গিয়েছিল। এতে শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে কি না জানি না। সত্য নয় যে সোহেল চৌধুরী ঘটনার দিন ট্রাম্প ক্লাবের অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য গিয়েছিল। আসামিরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’
মামলার ৬ নম্বর সাক্ষী আবদুল খালেক। খালেক আদালতকে বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ২ জুন সোহেল চৌধুরীর বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে ছিলাম। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি। আমার দায়িত্ব পালনের সময় সোহেল চৌধুরীসহ কয়েকজন রাত ২টা ১৫ মিনিটে বাসায় আসে। বাসায় নিজ কক্ষে যাওয়ার ৮ থেকে ১০ মিনিট পর দুজন পুলিশ সদস্য সাদাপোশাকে আসেন। তাঁদের দুজনকে আমরা চেহারায় চিনি। পুলিশ দুজন স্যারের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ মিনিট বাসার ভেতরে অবস্থান করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা চলে যান। রাত ২টা ৫০ মিনিটে সোহেল চৌধুরী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে পুনরায় বাসা থেকে বের হয়ে যান।’
আবদুল খালেক আদালতকে বলেন, ‘তাঁরা চলে যাওয়ার পর সোহেলের গাড়িচালক সেলিম বাসা থেকে বাইরে যান। চালককে না নিয়ে সোহেল চৌধুরী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে হেঁটে বাসা থেকে বের হন। সোহেল চৌধুরী বাসা থেকে বের হওয়ার ১০ মিনিট পর গুলির শব্দ শুনতে পাই। গুলির শব্দের পর চালক সেলিম দৌড়ে বাসায় আসেন। তিনি আমাকে গেট খুলতে বলেন। গেট খোলার পর তিনি বাসায় ঢোকেন। এরপর ওয়্যারলেসে স্যারের (সোহেল চৌধুরী) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। ওয়্যারলেসে তখন তিনি আমাকে বলেন, গুলির শব্দ পেলাম। বাইরে যা তো। কী খবর। আমি বললাম, আমার ডিউটি তো হাউসে। আমি বাইরে যাব কী করে? তিনি বললেন, কোনো অসুবিধা নেই, তুই যা। আমি হাউসে আছি। তখন চালককে বাসায় রেখে গেট খুলে বের হওয়া মাত্র দুজন আউট লোক বলল, সোহেল চৌধুরী ক্লাবের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে।’
আবদুল খালেক আরও বলেন, ‘আমি চালককে বললাম, গাড়ি নিয়ে স্যারের কাছে যাও। চালক গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার পর আমি চৌধুরী সাহেবের অফিসের দরজায় কড়া নাড়ি। সোহেল চৌধুরীর কথা শুনে আম্মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফজরের নামাজের একটু আগে আমাকে ওয়্যারলেস করে অফিসের একজন টেকনিশিয়ান বলল, চৌধুরী সাহেব আর নেই। অফিসের স্টাফরা বলাবলি করছিল, গোলাগুলির সময় আদনান সিদ্দিকী হাতেনাতে ধরা পড়েন।’
মামলার ৭ নম্বর সাক্ষী নাছিমুল আলম চৌধুরী। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি সোহেল চৌধুরীর বন্ধু ছিলাম। আমি শুনেছি যে ট্রাম্প ক্লাবে যাওয়ার পর ক্লাবে ঢোকা নিয়ে তর্কাতর্কির পর তাকে গুলি করা হয়। পরে সে হাসপাতালে মারা যায়। সোহেল চৌধুরীকে কারা মেরেছে জানি না।’
মামলার ৮ নম্বর সাক্ষী আহম্মেদ সাঈদ আদালতকে বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী আমার বন্ধু ছিল। আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। ট্রাম্প ক্লাবে কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না আমি কিছুই জানি না।’
মামলার ৯ নম্বর সাক্ষী চিকিৎসক বেলায়েত হোসেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি সোহেল চৌধুরীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করি। এরপর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দিই।’
মামলার ১০ নম্বর সাক্ষী তপন লাল দত্ত। রাষ্ট্রপক্ষ তাঁকেও বৈরী সাক্ষী ঘোষণা করেন। সাক্ষী তপন লাল দত্ত আদালতকে বলেন, ‘আমি ট্রাম্প ক্লাবে ওয়েটার হিসেবে চাকরি করতাম। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করি। ঘটনার তারিখ ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর। ঘটনা কতটার সময় বলতে পারব না। ভোর ৬টায় হোটেল থেকে বের হয়ে আসি। সোহেল চৌধুরী খুন হয়েছে এটা শুধু জানি।’