ঢাকায় মুঠোফোন চুরি-ছিনতাইয়ে অন্তত ২০টি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার কয়েকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় দৈনিক শতাধিক মুঠোফোন ছিনতাই করা হয়। এখন এসব মুঠোফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করা হচ্ছে। আগে এগুলো ফুটপাত ও বিপণিবিতানে বিক্রি করা হতো। তবে চুরি-ছিনতাইয়ের মুঠোফোন এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
চুরি-ছিনতাইয়ের মুঠোফোন উদ্ধার ও চক্রের সদস্যদের নিয়ে কাজ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক দল। ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ ও র্যাবের ধারাবাহিক অভিযানের ফলে ক্রেতার কাছে সরাসরি চোরাই মুঠোফোন বিক্রি অনেক কমে গেছে। এখন এসব মুঠোফোন বিক্রি হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এ ধরনের মুঠোফোন বিক্রির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকগুলো গ্রুপ রয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, ছিনতাই হওয়া কম দামি মুঠোফোনগুলো সরাসরি গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট ও গুলিস্তান সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে ফুটপাতসহ ঢাকার কয়েকটি ফুটপাতে বিক্রি হয়। আর ভালো কোম্পানির দামি মুঠোফোনগুলো কিনে নেন কয়েকজন ব্যক্তি। তাঁদের দুজন টিপু ও শহিদকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তাঁরা ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, পুরো রাজধানীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ছিনতাই করেন চক্রের সদস্যরা। ঢাকায় অন্তত ২০টি মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা দিনে ৫ থেকে ৭টি মুঠোফোন ছিনতাই করে। তাদের কাছ থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী এসব মুঠোফোন কিনে নিয়ে বিক্রি করেন।
চুরি-ছিনতাইয়ের মুঠোফোন উদ্ধার ও একাধিক চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির তেজগাঁও ও ওয়ারী বিভাগ। তেজগাঁও বিভাগের সাবেক সহকারী কমিশনার (বর্তমান সহকারী কমিশনার মিরপুর অঞ্চল) হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আগে বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চুরি-ছিনতাইয়ের মুঠোফোন বিক্রি হতো। এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চোরাই মুঠোফোন বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি কারওয়ান বাজার এলাকায় মঞ্জুর আলম নামের এক ব্যবসায়ীর মুঠোফোন পকেট থেকে চুরি হয়। অভিযোগ করে মুঠোফোন উদ্ধার হবে না মনে করে তিনি থানায় যাননি। মঞ্জুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এক পরিচিতের মুঠোফোন ছিনতাই হয়েছিল। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেও মুঠোফোন উদ্ধার হয়নি।
তবে গত ২১ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আকতারের মুঠোফোন ছিনতাইয়ের পর তেজগাঁও থানার পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কারওয়ান বাজারকেন্দ্রিক ছিনতাইকারী চক্রের ২৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় ওই শিক্ষার্থীর ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনটি। চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যরা ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিন মাসে কারওয়ান বাজার ও আশপাশ এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা।
ডিবি সূত্র জানায়, ঢাকার ১৬টি জায়গায় প্রতিদিনই মুঠোফোন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও এর আশপাশে দিনে তিন থেকে পাঁচটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তিনটি পেশাদার দলের সঙ্গে তেজগাঁও এলাকার ২৫ জন ভাসমান শিশু জড়িত রয়েছে এসব চুরি ও ছিনতাইয়ে। ঢাকার শ্যামলী, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর ও গাবতলী এলাকায় মুঠোফোন ছিনতাই করে চারটি চক্র। এ চক্রগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন শহিদ। আর এ চক্রের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের মুঠোফোন কিনে বিক্রি করেন টিপু। বিভিন্ন সময় ডিবির অভিযানে এসব এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িত দুটি চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, বনানী, গুলশান, ভাটারা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে তিনটি ছিনতাইকারী চক্র। হাতিরঝিল, রামপুরা, মগবাজার ও মালিবাগ এলাকায় তিন থেকে চারটি চক্র রয়েছে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও নিউমার্কেট এলাকায় সক্রিয় রয়েছে অন্তত পাঁচটি চক্র। গুলিস্তান, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় আরও চার থেকে পাঁচটি চক্র মুঠোফোন ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, এই ছিনতাইকারীরা পথচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনতাই করেন। আবার গাড়ির জানালার পাশে বসে কথা বলা অবস্থায় মুঠোফোন থাবা দিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা।